দুর্গাপূজা আসলেই কলকাতার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাকিয়ে থাকেন বাংলাদেশের দিকে— শারদোৎসব হবে আর পদ্মার ইলিশ পাতে উঠবে না, তা যেন কল্পনাতীত। প্রতিবেশী দেশের সৌজন্যে পাওয়া ইলিশের স্বাদ পূর্ণতা এনে দেয় উৎসবের। তবে গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সৌজন্যতায় ভাটা পড়েছে। ফলে এবার শারদীয় দুর্গাপূজায় পদ্মার ইলিশের স্বাদ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মাছপ্রেমী বাঙালির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, যদিও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির অনুমতি মিলেছে, বরাদ্দ কম হওয়ায় জোগান ও দামের চাপ ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার মৌখিকভাবে তিন হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে সম্প্রতি ঢাকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর ভারতে মাত্র এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
গত বছর প্রথমে তিন হাজার টনের অনুমোদন থাকলেও পরে তা কমিয়ে ২ হাজার ৪২০ টন পাঠানো হয়েছিল। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতার মৎস্য ব্যবসায়ীরা হতাশ। দেশটির সংবাদমাধ্যমকে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা তিন হাজার টন ইলিশ আশা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে অনেক কম দেওয়া হচ্ছে। এতে বাজারে দামের আগুন জ্বলে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, বরিশাল বিভাগে ইলিশ শিকার জুনে গত বছরের তুলনায় প্রায় সাত হাজার টন কমেছে, জুলাইয়েও জোগান ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই কারণে রপ্তানি সীমিত করা হয়েছে।
অপরদিকে, ভাদ্র সংক্রান্তি বা অরন্ধন উৎসবের মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির ঘরে ঘরে এই দিনে ইলিশ অপরিহার্য। বাজারে কম জোগান থাকায় চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের অনুমান, যদি তিন হাজার টন রপ্তানি হতো তবে দাম এতটা বাড়ত না। গত বছর ১ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ৩ কেজির ইলিশ কেজিপ্রতি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবার সেই মাপের মাছের দাম ন্যূনতম ২ হাজার ৫০০ টাকার দিকে উঠতে পারে। কলকাতার পাইকারি বাজারেও ইতোমধ্যেই দাম বাড়ার প্রভাব দেখা দিয়েছে।
বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলেও জোগান কম। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়ার বাজারে স্থানীয় ইলিশের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এক মৎস্যজীবী সংগঠন জানিয়েছে, বড় মাপের ইলিশের শিকার গত বছরের তুলনায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে। কিছুটা ভরসা দিয়েছে গুজরাট থেকে আসা ইলিশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য থেকে মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরীর নির্দেশে গুজরাটের ভরুচ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টন ইলিশ কলকাতায় এসেছে। এতে বাজারে চাপ কিছুটা কমেছে, কিন্তু পদ্মার ইলিশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ইলিশ রপ্তানি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন বিষয় নয়। শেখ হাসিনার সময়ে দুর্গাপূজার আগে ইলিশ রপ্তানি ‘ইলিশ কূটনীতি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর ইউনূস প্রশাসনের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে ভারতে রপ্তানি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল। পরে সীমিত পরিমাণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় রপ্তানি নীতিতে (২০১৫-১৮) শর্তসাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানি তালিকাভুক্ত। ২০১৯ সালের আগে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও সেই বছর থেকে আবার নতুনভাবে রপ্তানি শুরু হয়, যা দুর্গাপূজার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে প্রাণ ফিরিয়েছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ধারাবাহিকতা এখন প্রভাবিত।
ইউনূস সরকার জানিয়েছে, ইলিশের মতো ক্ষুদ্র ইস্যু ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে এর প্রভাব তীব্র। উৎসবের আনন্দে পদ্মার ইলিশ যেন অপরিহার্য। এখন সবার চোখ বাজারের দিকে। ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ কবে, কীভাবে পৌঁছাবে এবং দাম কত হবে— এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অপেক্ষার। তবে প্রায় নিশ্চিত যে, এ বছর পূজায় ইলিশের স্বাদ নিতে চাইলে সাধারণ ক্রেতার পকেটে চাপ বাড়বে।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন