অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত বিতর্কিত এক ত্রাণ পরিকল্পনার আওতায় গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) প্রধান জ্যাক উড পদত্যাগ করেছেন। রোববার (২৫ মে) গভীর রাতে পদত্যাগ করেন তিনি।
সাবেক মার্কিন মেরিন উড বলেছেন, ‘এই প্রকল্প মানবিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এর মাধ্যমে প্রকৃত সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমি সেই নীতিগুলো কখনোই ত্যাগ করব না।’
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এই পরিকল্পনায় প্রাইভেট ঠিকাদারদের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ বিতরণ করা হবে। তবে বিতরণ হবে ইসরায়েল নির্ধারিত কিছু কেন্দ্র থেকে, যেখানে প্রত্যেক ফিলিস্তিনি নাগরিককে ২০ কেজি ওজনের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসামগ্রীর বাক্স সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—আহত, বৃদ্ধ, কিংবা অসহায় মানুষরা এই সহায়তা কীভাবে সংগ্রহ করবে?
জাতিসংঘ এই পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে এবং এতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজার মানুষের মধ্যে আরও বাস্তুচ্যুতি ঘটবে এবং ‘দুর্ভিক্ষকে দরকষাকষির অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করা হবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিও সতর্ক করেছে যে, গাজার জনগণ বর্তমানে ‘অনাহারের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে।
উডের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় জিএইচএফ জানায়, তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে এবং সোমবার থেকেই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করবে। তাদের লক্ষ্য, সপ্তাহের মধ্যেই ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। সংস্থাটি আরও দাবি করে, ‘স্থিতাবস্থায় যারা লাভবান, তারা নতুন ও সৃজনশীল সমাধানগুলো ভেঙে দিতে চায়, কারণ তারা ভয় পায়—এগুলো সফল হতে পারে।’
তবে আন্তর্জাতিক মহলে জিএইচএফ-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই সংগঠনটির জন্ম হয়েছে ইসরায়েলি সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর সদস্য ও ব্যবসায়ী অংশীদারদের মাধ্যমে। এমনকি সংস্থাটির পেছনে যেসব ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বা সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব জ্যান এগেল্যান্ড এই পরিকল্পনাকে ‘সামরিকীকরণ, বেসরকারীকরণ ও রাজনীতিকরণ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ নিরপেক্ষতার নীতির সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই নতুন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হামাসের ওপর গাজাবাসীর নির্ভরতা কমিয়ে আনা। তবে মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, প্রকৃত সহায়তা পৌঁছাতে হলে এমন ত্রাণ কাঠামো নয়, বরং পূর্বের স্বচ্ছ ও পরীক্ষিত ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :