কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইসরায়েলে বড় হামলার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এই হামলার শঙ্কায় ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ের কাছে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টার পর থেকে এই সতর্কতা কার্যকর হয় এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগের রাতেই ইরানের ছোড়া কয়েক শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের অন্তত তিনজন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। এই হামলায় তেল আবিব, রামাত গান, রিশোন লেচিয়নের মতো শহরে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ হয়।
বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন, যানবাহন ও একটি হাসপাতাল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ হামলার বেশ কিছু অংশ প্রতিহত করলেও পুরোপুরি সফল হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো।
এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে শনিবার সকালে ইসরায়েল ইরানের তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দর, বুশেহর প্রদেশের একটি গ্যাসক্ষেত্র ও শোধনাগার এবং বন্দর আব্বাসে হামলা চালায়।
এই হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটে এবং অন্তত ৭৮ জন নিহত হয় বলে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি জানিয়েছে।
পাল্টা এই হামলার পর শনিবার রাতেই ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে ঘোষণা আসে, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বড় ধরনের ও ধ্বংসাত্মক পাল্টা হামলা চালানো হবে।’
ইরানি সেনাপ্রধান ও আইআরজিসি-র কর্মকর্তারা একে ‘জাতীয় প্রতিশোধ’ বলে আখ্যা দেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিজেদের নতুন অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এই অভিযানের আওতায় তারা দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোসহ বেশ কয়েকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘আয়াতুল্লাহদের প্রত্যেক ঘাঁটি, প্রত্যেক গোপন গুদাম এখন আমাদের টার্গেট।’
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও যুক্তরাজ্য দুই দেশকেই দ্রুত সংঘর্ষ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হাসপাতালগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রাখা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিমান চলাচল আংশিক বন্ধ এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই হামলা-পাল্টা হামলা সরাসরি যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যার প্রভাব গোটা মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর পড়তে পারে।
সূত্র- ইরানওয়ার