ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান যেসব প্রাণঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে তা বেসামরিক মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত। কারণ যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু পরেও এগুলো বিস্ফোরিত না হয়ে মাটির নিচে থেকে যেতে পারে। এসব প্রাণঘাতী বোমার মধ্যে সবথেকে বেশি যেই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলিদের দুশ্চিন্তার কারণ তা হলো ক্লাস্টার বোমা। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশেষ কি আছে এতে:-
ক্লাস্টার বোমা এক ধরনের বিশেষ বোমা যা ছোড়া হলে আঘাত হানার পূর্বেই ভিতর থেকে অগণিত আরও ক্ষুদ্রাকার ছোট বোমা বেরিয়ে আসে। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা ছোট বোমাগুলোকে সাব-মিউনিশন বা বোম্বলেট বলে। এই সাব-মিউনিশন বা বোম্বলেটগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে যা সাথে সাথে যদি বিস্ফোরিত না হয় তবুও যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু বছর পরও বিস্ফোরিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এই ছোট ছোট বোমাগুলো একটা বড় এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে গিয়ে ধ্বংস, হতাহত এবং আতঙ্ক তৈরি করে।
একটি সাধারণ ক্লাস্টার বোমার মধ্যে থাকতে পারে ১০০ থেকে ২০০টিরও বেশি ক্ষুদ্র বিস্ফোরক। এগুলো বিস্ফোরিত হলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে লোহার টুকরো, যা ৩০০-৪০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সবকিছুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সামরিক কৌশলে বলা হয়, এটি শত্রুর সরঞ্জাম, যানবাহন বা সৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম। তবে বাস্তবে এগুলোর আঘাতের নির্ধারিত সীমা নেই। শিশু, বৃদ্ধ কিংবা সাধারণ মানুষও সহজে এতে হতাহত হয়।
এ বোমার বিশেষ উদ্বেগের জায়গা হলো, ক্লাস্টার বোমার অনেক সাবমিউনিশন তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরিত হয় না। একে বলা হয় ডাড বা অবিস্ফোরিত বোমা, যা মাটিতে বা গাছপালার মধ্যে থেকে যায় বছরের পর বছর। এগুলো পরে কোনো সাধারণ মানুষের পায়ের ধাক্কায় বা শিশুর স্পর্শে বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, লাওস, লেবানন, সিরিয়া কিংবা ইউক্রেন এসব অঞ্চলে আজও অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার বোমার কারণে নতুন নতুন হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে।
২০০৮ সালে কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশনস (সিসিএম) নামে এক আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়, যেখানে ১১০টির বেশি দেশ ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি বড় সামরিক শক্তি এই চুক্তিতে সই করেনি এবং এখনো এ ধরনের অস্ত্রের মজুত রাখছে ও ব্যবহার করছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বহু সংস্থা ক্লাস্টার বোমার বিরুদ্ধে সোচ্চার। কারণ এ বোমা যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু বছর পরও সাধারণ মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে।
আপনার মতামত লিখুন :