ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

ইরানে আবারও আঘাত হানল যুক্তরাষ্ট্র!

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

টানা ১২ দিনের তীব্র সংঘাত শেষে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে এই সংঘাতের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে নতুন উত্তেজনার জন্ম দেয়। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে ও আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তেহরানের সমর্থন ঠেকাতে মার্কিন চাপ অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইরানের তেল নির্ভর অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হানল যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মার্কিন অর্থমন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানায়, ইরানের জ্বালানি তেল বিক্রির সঙ্গে জড়িত একাধিক গোষ্ঠীর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো তেল বিক্রির মাধ্যমে ইরানি সরকার যে বিশাল রাজস্ব উপার্জন করে, সেটি বন্ধ করা।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরান থেকে কোটি কোটি ডলারের জ্বালানি তেল ক্রয় ও পরিবহন করা হচ্ছে। এতে জড়িত আছে ইরাকি-ব্রিটিশ ব্যবসায়ী সালিম আহমেদ সাইদ পরিচালিত একাধিক প্রতিষ্ঠানের একটি চক্র। ওই ব্যক্তি অন্তত ২০২০ সাল থেকে এই কাজ করে আসছেন বলে মার্কিন প্রশাসন জানতে পেরেছে।

মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ইরাক-ব্রিটেন দ্বৈত নাগরিক সালিম আহমেদ সাইদ ২০২০ সাল থেকে একটি জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে ইরানের তেল গোপনে বিক্রি করে আসছেন। তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জাহাজ ব্যবহারের মাধ্যমে ইরানি তেলকে ইরাকি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ভুয়া কাগজপত্রে ‘ইরাকি তেল’ হিসেবে দেখিয়ে পশ্চিমা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল।

এই জালিয়াতির মাধ্যমে ইরান থেকে কোটি কোটি ডলারের তেল বিক্রির প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। তাদের মতে, তেল পরিবহনের এই চক্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাকের মাধ্যমে কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্র আরও কয়েকটি তেলবাহী জাহাজের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যেগুলো ইরানি তেল পরিবহনে যুক্ত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। এর ফলে ইরানের তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’—যে বহর গোপনে তেল পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এর ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। ‘আল-কারদ আল-হাসান’ নামের এ সংস্থা এবং এর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কোটি কোটি ডলারের গোপন লেনদেনের মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে।

মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মার্কিন ভূখণ্ডে থাকা সম্পদ জব্দ করা যাবে এবং মার্কিন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক বা বাণিজ্যিক লেনদেন করতে পারবে না।

উল্লেখ্য, আগেই রয়টার্সের একটি তদন্তে দাবি করা হয়েছিল, বছরে গোপনে একশ কোটি ডলার আয় করছে ইরান এই তেল চক্রের মাধ্যমে। একই সঙ্গে, ২০২২ সাল থেকে ইরাকে তেহরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোরও প্রভাব ও তহবিল বেড়ে গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের অর্থনীতি ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, যদিও দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা চাপ মোকাবিলায় বিকল্প পথ খুঁজে এসেছে। তবে, একযোগে সামরিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপে ইরান কতটা টিকতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।