ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফিলিস্তিনিদের আক্ষেপ

‘পশুরাও আমাদের চেয়ে ভালো জীবন কাটাচ্ছে’

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। ছবি- সংগৃহীত

গাজা সিটিতে ‘ইসরায়েলি’ হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তাদের পরিস্থিতি হতাশাজনক এবং তাদের আশ্রয়ের জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। এমনকি পশুরাও তাদের চেয়ে ভালো জীবন কাটাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সোমবার (১৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।

আহমেদ হাব্বুশ নামে গাজার এক বাসিন্দা বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই কঠিন। বেশিরভাগ মানুষের কাছে চলাচলের জন্য পরিবহন খরচও নেই। তিনি বলেন, এটা কোনো জীবন নয়, আমরা ক্লান্ত।’ পশুরাও তাদের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করছে বলে অভিমত তার।

৬২ বছর বয়সি খালেদ ইমাদ বলেন, ইসরায়েলের হুমকি এবং তীব্রতর হামলার পর তিনি পায়ে হেঁটেই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি হাঁটতে থাকব। আমি জানি না কী হচ্ছে। এই দরিদ্র, ক্লান্ত, মৃত্যুমুখে পতিত মানুষদের বাঁচাতে বিশ্ব কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না।’

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় রোববার (১৪ আগস্ট) নিহত হয়েছেন আরও ৫৩ ফিলিস্তিনি। গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় ১৬টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, যার মধ্যে তিনটি আবাসিক টাওয়ারও রয়েছে। ইসরায়েল গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তাদের অভিযান জোরদার করেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ আবারও গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রোববার নিহত হওয়া লোকজনের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই গাজা সিটির। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, নতুন করে আরও দুজন অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছে। ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২২ জনে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্সে লিখেছেন, শুধু গত চার দিনেই গাজা সিটিতে তাদের ১০টি ভবন হামলার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিকও রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি লিখেছেন, ‘গাজায় কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। কেউ নিরাপদ নয়।’

এদিকে অবিরাম হামলায় পরিবারগুলো আবারও দক্ষিণে আল-মাওয়াসির দিকে পালাচ্ছে। এই অঞ্চলকে ইসরায়েল ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করেছে, যদিও সেখানেও বারবার হামলা হয়েছে।

বাস্তুচ্যুত আহমেদ আওয়াদ বলেন, শনিবার উত্তর গাজা থেকে তিনি মর্টার হামলার মধ্যে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান। তিনি বলেন, ‘মধ্যরাতে এসে দেখি পানি নেই, টয়লেট নেই, কিছুই নেই। পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ।’

আরেকজন ফিলিস্তিনি আবেদআল্লাহ আরাম জানান, তার পরিবার তীব্র পানির সংকটে আছে। খাবার অপ্রতুল, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। শীত আসছে, নতুন তাঁবুর জরুরি প্রয়োজন। এই এলাকায় আর বেশি মানুষ রাখা সম্ভব নয়।

আরেকজন বলেন, এক সপ্তাহ আগে আসার পরও তিনি আশ্রয় পাননি। ‘আমার বড় পরিবার আছে— শিশু, মা, দাদিসহ। শুধু বোমা নয়, ক্ষুধাও আমাদের গ্রাস করছে। দুই বছর ধরে আমরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছি। এই গণহত্যামূলক যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’

এদিকে ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, আল-মাওয়াসির পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র টেস ইঙ্গ্রাম মনে করেন, ‘গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি এই কথিত মানবিক অঞ্চলও না। প্রতিদিন শরণার্থী শিবিরে মানুষের ভিড় বাড়ছে।’

টেস ইঙ্গ্রাম এক নারীর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, যিনি গাজা সিটি থেকে উচ্ছেদের পর রাস্তার ধারে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হন। ইঙ্গ্রাম বলেন, ‘এ রকম হাজারো পরিবার এখানে এসেছে এবং এখন টিকে থাকার জন্য ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাতে সংগ্রাম করছে।’