টানা ১২ দিনের যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে এই যুদ্ধবিরতি টেকসই হিসেবে নয়। বরং কৌশলগত বিরতি হিসেবেই দেখছে ইরান। দীর্ঘদিনের কৌশলগত ধৈর্যের নীতির অংশ হিসেবে ইরান নিজেদের নতুন করে সাজাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একদিকে, ইসরায়েল এ যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করছে। অন্যদিকে ইরানও এটিকে পরাজয় নয়, বরং কৌশলগত সাফল্য হিসেবেই দেখছে। তাদের দৃষ্টিতে এটি একটি ‘চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ’। যা যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রিন সিগন্যাল’-এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। অতীতের ইরান-ইরাক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ইরান বিশ্বাস করছে, সময়ই চূড়ান্ত বিজয় এনে দেবে। আর সেই সময়কে কাজে লাগাতেই তারা আপাতত কৌশলগত বিরতির পথে হাঁটছে।
সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে অবতীর্ণ দুই রাষ্ট্র
২০২৫ সালের জুনের শুরুতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের ভেতরে অন্তত ২০০টির বেশি স্থানে বিমান হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল—ফোর্ডো, নাতাঞ্জসহ রেভল্যুশনারি গার্ডের সামরিক স্থাপনা। এই হামলায় নিহত হন ইরানের এলিট ফোর্স ‘আল কুদস ব্রিগেড’-এর দুই সিনিয়র কমান্ডার।
এর পাল্টা জবাবে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ চালু করে। যেখানে তারা ইসরায়েলের দিকে ১৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ১০০টির বেশি ড্রোন পাঠায়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে তেলআবিবে হামলা চালায় ইরান।
ইরানের যুদ্ধ প্রস্তুতি: কৌশলগত পুনর্গঠন
সূত্রমতে, ইরান এখন তার পারমাণবিক গবেষণাগার ও সামরিক ঘাঁটি নতুনভাবে প্রতিরক্ষা বলয়ে ঢেকে ফেলছে। রাশিয়া-উৎপাদিত এস-৩০০ এবং নিজস্ব বিভার-৩৭৩ ও খোরদাদ-১৫ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কাসিম বশির নামে নতুন প্রজন্মের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও যুক্ত হয়েছে ইরানি অস্ত্রাগারে। যার পরিসীমা ১২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলকে লক্ষ্যবস্তু করার ক্ষমতা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বশক্তির প্রতিক্রিয়া
এই সংঘাতের পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পারস্য উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরে মার্কিন রণতরীগুলো মোতায়েন করা হয়েছে। একাধিক রিপোর্ট বলছে, ইরানি ড্রোন ও মিসাইল সিস্টেমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও সাইবার ইউনিট হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন যুদ্ধে সরাসরি না জড়ালেও, কূটনৈতিকভাবে ইরানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তারা জাতিসংঘে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব তুলেছে।
সম্ভাব্য যুদ্ধের ভয়াবহতা ও বৈশ্বিক প্রভাব
এই যুদ্ধ একবারে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। হিজবুল্লাহ (লেবানন), হুতিরা (ইয়েমেন) এবং সিরিয়া হয়ে উঠছে প্রক্সি যুদ্ধের অগ্রভাগ। ইরান তাদের মাধ্যমে ইসরায়েলের সীমান্তে চাপে রাখছে। এদিকে, ইসরায়েলও জর্ডান ও মিশরের মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা বলয় প্রশস্ত করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, যার পরিণতি পড়বে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে। ইতোমধ্যে ব্রেন্ট অয়েলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে। স্টক মার্কেটগুলোতেও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।

-20250706105017.webp)

-20250707090624.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন