শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৫, ১১:০৬ এএম

কেমন হতে পারে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পরিণতি?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৫, ১১:০৬ এএম

কেমন হতে পারে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পরিণতি?

প্রতীকী ছবি

২০২৫ সালে ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই দুই পরমাণু অস্ত্রধারী দেশের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। 

ইতিহাস, বর্তমান সামরিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের গবেষণার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

সম্ভাব্য প্রাণহানি 

যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত শুধু প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে সীমিত থাকে, তবু এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। 

সামরিক দিক থেকে ভারতের পক্ষে আনুমানিক ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার সেনা নিহত বা আহত হতে পারেন। পাকিস্তানের পক্ষেও ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার সেনার প্রাণহানি বা আঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিসংখ্যান ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং কারগিল যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং সাম্প্রতিক সামরিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছে।

এ ছাড়াও যুদ্ধের ফলে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে প্রায় ১ লাখ থেকে ২.৫ লাখ পর্যন্ত এবং পাকিস্তানে আনুমানিক ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ নাগরিক নিহত হতে পারেন। 

এই সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা গবেষণা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমে। শহরে বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত, সীমান্ত অঞ্চলে গোলাবর্ষণ এবং যুদ্ধকালীন উদ্বাস্তু পরিস্থিতির কারণে এ ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল

যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তাহলে এর পরিণতি হবে সর্বনাশা। একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুই দেশ মিলিয়ে যদি ১০০টির মতো পরমাণু বোমা ব্যবহার করে, তাহলে প্রথম সপ্তাহেই প্রাণ হারাতে পারে প্রায় ৫০ থেকে ১২৫ মিলিয়ন মানুষ। 

এই পরিসংখ্যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্রের সিমুলেশন মডেলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে। সেখানে শহরঘেঁষা আক্রমণ ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে বিস্ফোরণের সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

পরমাণু বিস্ফোরণের ফলে শুধু মানবিক বিপর্যয়ই নয়, পরিবেশগতভাবেও এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আকাশে ধোঁয়ার ঘন স্তর জমে গিয়ে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধা দেবে। ফলে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে এবং দীর্ঘস্থায়ী এক ‘পরমাণু শীতকাল’ শুরু হবে। 

এর প্রভাবে কৃষি উৎপাদন প্রায় সম্পূর্ণভাবে থেমে যাবে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এ ধরনের পরিণতির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি

যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবু উভয় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের ক্ষেত্রে এই যুদ্ধের ফলে জাতীয় আয়ের আনুমানিক ক্ষতি হবে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ কোটি টাকার মতো। 

ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে রয়েছে প্রধান বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্র।

পাকিস্তানের অর্থনীতিতেও এই যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। আনুমানিক ক্ষতি হবে ১০ থেকে ২০ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ। বিশেষ করে লাহোর, করাচি এবং রাওয়ালপিন্ডির মতো শহর, যেগুলো দেশটির শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র, সেগুলোর অবকাঠামো ও উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

এসব অনুমান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

যদি যুদ্ধ পরমাণু অস্ত্রের পর্যায়ে পৌঁছায়, তবে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে। যুদ্ধের সরাসরি ও পরোক্ষ প্রভাবে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, তার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। 

এ তথ্য পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাবের বিশ্লেষণ করেছে।

দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব

যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাবগুলোর একটি হবে বিশালসংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি। যদি সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে কোটি কোটি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের নাগরিকরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেবে, যা একটি বৃহৎ মানবিক সংকট সৃষ্টি করবে। 

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার পূর্ববর্তী যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এরকম বাস্তুচ্যুতি দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

পর্যাপ্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের অভাবে শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। একই সঙ্গে, যুদ্ধের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশেষ করে সিন্ধু ও গঙ্গা নদীসহ প্রধান জলসম্পদ দূষিত হয়ে পড়বে, যা শুধু মানবস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক নয়, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

বিস্ফোরণ, পরমাণু বিকিরণ এবং রাসায়নিক দূষণের কারণে চাষযোগ্য জমি অনুপযোগী হয়ে যাবে।

অন্যদিকে, যুদ্ধকালীন ও পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তীব্র হতে পারে। সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতা, জন-অসন্তোষ, বিদ্রোহ এবং এমনকি সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কাও তৈরি হবে। 

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, যুদ্ধ শুধু বাহ্যিক ক্ষতিই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকেও গভীরভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে তা শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক ভয়ানক বিপর্যয় বয়ে আনবে। একদিকে যেখানে কোটি কোটি প্রাণ ঝরে পড়বে, অন্যদিকে দুই দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশ দীর্ঘমেয়াদে ভেঙে পড়বে।

ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখনই বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা, মধ্যস্থতা ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!