রিয়াদ–ইসলামাবাদের নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ঘিরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য চুক্তির পারমাণবিক দিক নিয়ে জল্পনা আরও উসকে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এক টিভি টক শোতে তিনি ইঙ্গিত দেন, চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা অস্ত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ সৌদি আরবকে দেওয়া হতে পারে।
তার ভাষায়, “আমাদের যা আছে এবং যে সক্ষমতা আমরা আয়ত্ত করেছি, তা এই চুক্তির অধীনে (সৌদি আরবকে) দেওয়া হবে।’ তবে একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সবসময় একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে।
১৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ (এসএমডিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আসিফ উপস্থিত ছিলেন। ফলে তার মন্তব্য পাকিস্তান প্রয়োজনে সৌদি আরবকে পারমাণবিক সহায়তা দিতে পারে—এমন আশঙ্কা আরও তীব্র হয়।
কৌশলগত বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামাবাদের এই বার্তা কেবল তেহরান নয়, বিশেষ করে ইসরায়েলকেও উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষাপট হলো সাম্প্রতিক উত্তেজনা অর্থাৎ গত সপ্তাহে কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলায় ছয়জন নিহত হন। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও অভিযানের বিস্তারের কারণে উপসাগরীয় রাজধানীগুলো ইতোমধ্যেই উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
তবে পরে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ স্পষ্ট করে জানান, পারমাণবিক অস্ত্র এই চুক্তির আওতায় নেই। এর পরপরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘কৌশলগত নীরবতা’ অবলম্বন করে।
শুক্রবারের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র শাফকাত আলী খান চুক্তি নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তাকে দু’বার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের পারমাণবিক নীতিতে, যেখানে কেবল ভারতের প্রতিরোধেই এ সক্ষমতা ব্যবহারের কথা বলা আছে, কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো নীতি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, তবে নির্দিষ্ট অবস্থান ব্যাখ্যা করেননি।
পাকিস্তান সবসময়ই বলেছে, তাদের কৌশলগত কর্মসূচি কেবল ভারতের হুমকি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছিল, এসব সক্ষমতা অন্য কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়।
চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পাকিস্তানি সেনাদের সৌদি আরবে মোতায়েনের বিষয়েও। তবে এ প্রশ্নও মুখপাত্র এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ১৯৬০-এর দশক থেকেই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পাকিস্তান–সৌদি সম্পর্কের মূল ভিত্তি। নতুন চুক্তি সেই দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্বকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
অন্যদিকে সৌদি কর্মকর্তারা চুক্তি স্বাক্ষরের পরই ইঙ্গিত দেন, এর মাধ্যমে রিয়াদ পারমাণবিক সুরক্ষা পাবে। সৌদি ভাষ্যকারেরাও সেই দাবি জোরদার করেন। যদিও যৌথ বিবৃতিতে চুক্তিকে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার লন্ডনে সাংবাদিকদের বলেন, আরও কয়েকটি দেশ ইসলামাবাদের সঙ্গে একই ধরনের কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এখনই কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে দার বলেন, অতীতে সৌদি আরব পাকিস্তানের অনানুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অংশীদার ছিল। তিনি সৌদিদের আর্থিক সহায়তার কথাও তুলে ধরে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার মতো কঠিন সময়ে তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি আইএমএফ সংকটের সময়ও তাদের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন