বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা, আশা, হতাশা আর না-পাওয়ার গল্পই যেন সঙ্গী ছিলেন এক মার্কিন দম্পতির। অসংখ্যবার আইভিএফ করিয়েছেন, ঘুরেছেন দেশ-বিদেশের নামী ফার্টিলিটি ক্লিনিকে। কিন্তু কপালে জোটেনি সেই একটিমাত্র সুখবর ‘আপনি মা হতে চলেছেন।’
তবে যুগ পাল্টেছে, বদলেছে চিকিৎসা পদ্ধতিও। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-র কল্যাণে এবার সেই দম্পতির কপালে জুটেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর খুশির বার্তা। ১৮ বছর পর গর্ভবতী হয়েছেন ওই নারী, ডিসেম্বরেই জন্ম নেবে তাদের প্রথম সন্তান।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ফার্টিলিটি সেন্টারে। চিকিৎসকেরা এই দম্পতির জন্য ব্যবহার করেন একটি অত্যাধুনিক এআই-ভিত্তিক প্রযুক্তি যার নাম ‘এসটিএআর’ (স্পার্ম ট্রেকিং অ্যান্ড রিকভারি)।
দম্পতির সন্তান না হওয়ার প্রধান কারণ ছিল অ্যাজোস্পার্মিয়া নামের একটি বিরল পুরুষ রোগ। এ অবস্থায় পুরুষের বীর্যে কার্যকরী শুক্রাণু থাকে না। বহুবার পরীক্ষা করেও কোনো কার্যকর শুক্রাণু পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে সাধারণ আইভিএফ পদ্ধতিও ব্যর্থ হচ্ছিল বারবার।
শেষ চেষ্টায় তারা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ওই সেন্টারে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা এআই প্রযুক্তিনির্ভর ‘এসটিএআর’ সিস্টেম ব্যবহার করে স্বামীর একটি সিমেন স্যাম্পল বিশ্লেষণ করেন। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই এই প্রযুক্তি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তিনটি কার্যকর শুক্রাণু খুঁজে বের করে, যেগুলো মানব চোখে বা সাধারণ মাইক্রোস্কোপে ধরা সম্ভব নয়।
এই তিনটি শুক্রাণু ব্যবহার করেই স্ত্রীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করে আইভিএফ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এর ফলেই গর্ভধারণ সম্ভব হয় এবং চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন, তিনি মা হতে চলেছেন।
এই যুগান্তকারী সাফল্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ওই নারী বলেন, ‘আমরা প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এতবার ব্যর্থ হওয়ার পর মনে হতো, আমাদের হয়তো কখনোই সন্তান হবে না। কিন্তু এখন আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকেই জিজ্ঞেস করি, এটা কি সত্যি?’
তিনি আরও বলেন,‘ এটা শুধু প্রযুক্তির অর্জন নয়, এটা মানবতার জয়। এই যাত্রায় পাশে ছিলেন চিকিৎসক, গবেষক, প্রযুক্তিবিদ তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য কেবল একটি দম্পতির জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশ্বে প্রতি ১০ জন দম্পতির মধ্যে একজন বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভোগেন, এবং অনেকের ক্ষেত্রেই সমস্যার উৎস হয় পুরুষের শুক্রাণুর ঘাটতি বা দুর্বলতা।
এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সুপ্ত শুক্রাণু শনাক্ত করে সন্তান জন্মদানের সুযোগ তৈরির এই পদ্ধতি ভবিষ্যতের চিকিৎসায় বিপ্লব আনতে পারে।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন