অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে গত মাসে মার্কিন বাজারে সবজির পাইকারি দাম অনেক দ্রুত বেড়েছে। এতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়েও এর প্রভাব পড়তে পারে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে সবজির পাইকারি দাম ৩৮ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যা যেকোনো পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ধারা অব্যাহত থাকলে রেস্তোরাঁ ও মুদি দোকানে শিগগিরই সবজির দাম বাড়তে পারে।
এ সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নিয়ে ভোক্তারা সম্ভাব্য মূল্যবৃদ্ধির দিকে নজর রাখছেন। সাধারণত আমদানিকারকরা এসব বাড়তি খরচ ক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দেন। যদিও এখন পর্যন্ত শুল্কের কারণে ভোক্তা দামে বড় ধরনের বৃদ্ধি দেখা যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সবজির দাম বাড়ার পেছনে শুল্কই একমাত্র কারণ নয়। আবহাওয়া, সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিও দামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য অর্থনীতিবিদ পার্ক ওয়াইল্ড এবিসি নিউজকে বলেন, ‘শুল্ক কখন ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে মানুষ সত্যিই কৌতূহলী। আমরা সকলেই নজর রাখছি। কিন্তু আমি একটি সূচকের একটি অংশের উপর ভিত্তি করে বন্দুক ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই না।’

জানুয়ারিতে প্রকাশিত মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র তার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি তাজা সবজি আমদানি করে। তাই এই খাত শুল্ক-প্ররোচিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শাকসবজির মতো পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো আগেভাগে মজুত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে খেলনা বা পোশাকের মতো পণ্য শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে আমদানি করে গুদামে রাখা যায়।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্য অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওর্তেগা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, সালাদ বিক্রির রেস্তোরাঁ চেইন সুইটগ্রিন জানিয়েছে, তাদের মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে শুল্কও একটি কারণ।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিকূল আবহাওয়া বা সরবরাহ ঘাটতিও দামের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, গত বছর ব্রাজিল ও ভিয়েতনামে খরার কারণে কফির দাম বেড়ে গিয়েছিল।
মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, জুলাই মাসে শেষ হওয়া বছরে কফির দাম ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, শুল্ক এই মূল্য সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতিও সবজির দামে প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি শ্রমিক অভিবাসী। সীমান্তে অভিযান ও আইনি সুরক্ষা বাতিলের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিলে মজুরি বাড়তে পারে, ফলে উৎপাদন খরচও বাড়বে।
২০২২ সালে পরিচালিত মার্কিন শ্রম বিভাগের জরিপের কেএএফ বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি শ্রমিক বলেছেন যে, তারা অ-নাগরিক অভিবাসী। ওর্তেগা বলেন, ‘সারা দেশে প্রচুর অভিবাসন অভিযান চালানো হয়েছে। ফসল কাটার জন্য মাঠে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এবং এর ফলে শ্রমের খরচ বেড়ে যেতে পারে এবং এই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যেতে পারে।’

তবে এখন পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত গ্রাহক দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত এক বছরে সবজির দাম মাত্র ০.২ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ২.৭ শতাংশ। ট্রাম্প দাবি করেছেন, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে অর্থ আসছে এবং এর বোঝা মূলত কোম্পানি ও বিদেশি সরকার বহন করছে, সাধারণ ক্রেতা নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, পাইকারি দামের এই ঊর্ধ্বগতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে কয়েক মাস পর ক্রেতাদের জন্য বড় ধাক্কা আসতে পারে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
সূত্র: এবিসি নিউজ
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন