ইউক্রেনকে তাদের দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। একইসঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে ৬ লাখের মধ্যে। যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফা খসড়া শান্তি প্রস্তাবে একথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রস্তাব অনুযায়ী, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাস অঞ্চলের যে অংশ এখনও ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোও রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি কিয়েভকে তাদের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬ লাখে সীমিত রাখতে হবে।
খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য পোল্যান্ডে ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান মোতায়েন থাকবে। তবে ন্যাটোর কোনও সেনা ইউক্রেনে অবস্থান করবে না এবং দেশটি কখনোই সামরিক এই জোটটিতে যোগ দেবে না— এ বিষয়ে সম্মত হতে হবে কিয়েভকে।
অন্যদিকে রাশিয়াকে আবার জি-৮ জোটে ফিরিয়ে আনা হবে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাদের পুনরায় যুক্ত করা হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, নথিটি এখনো ‘কার্যকরী খসড়া’ মাত্র।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। এটি রাশিয়া ও ইউক্রেন— দুই দেশের জন্যই ভালো।’
তিনি আরও জানান, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রায় এক মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে ‘নীরবে’ এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। পরিকল্পনাটি মস্কোর দাবি অনুযায়ী তৈরি বলে যে উদ্বেগ রয়েছে, সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
মার্কিন এই পরিকল্পনার যে নথিটি এএফপি দেখেছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে বাস্তবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ এই স্বীকৃতি দেবে।’
যদিও কিয়েভ এখনো লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এছাড়া ক্রিমিয়া ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে নেয়।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দোনেৎস্কের যে অংশগুলো থেকে ইউক্রেন সরে আসবে, সেগুলোকে নিরস্ত্র অঞ্চল ঘোষণা করা হবে এবং সেখানে রুশ বাহিনী প্রবেশ করবে না। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন ও জাপোরিজঝিয়া — যেগুলো রাশিয়া দখল করেছে বলে দাবি করে — সেগুলোকে ‘সংঘাত রেখা বরাবর’ স্থবির অবস্থায় রাখা হবে।
দনবাস, খেরসন ও জাপোরিজঝিয়া নিয়ে মার্কিন এই পরিকল্পনাটি মূলত মস্কোর আগের দাবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি। প্রস্তাব অনুযাযী, ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিজঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আইএইএ তত্ত্বাবধান করবে এবং এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রায় চার বছরের কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়াকে আবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত হতে দেওয়া হবে এবং জি-৮ জোটে ফিরে আসার সুযোগ দেবে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, ‘প্রত্যাশা করা হচ্ছে রাশিয়া আর প্রতিবেশী দেশগুলোতে হামলা করবে না এবং ন্যাটো জোটও আর সম্প্রসারিত হবে না।’
তবে রাশিয়া আবার ইউক্রেনে হামলা চালালে সব নিষেধাজ্ঞা সঙ্গে সঙ্গে আবার কার্যকর হবে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হবে সমন্বিত সামরিক প্রতিক্রিয়া।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের যেকোনো সমাপ্তিতে ‘সম্মানজনক শান্তি’ এনে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের শান্তি দরকার... এমন শান্তি, যা আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের মর্যাদাকে সম্মান করে।’
এএফপি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ইউক্রেনকে রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো মেনে নিতে বলা হচ্ছে, অথচ ফিরতি সুবিধা মিলছে খুবই কম।
খসড়া অনুযায়ী, রাশিয়া দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। মূলত রাশিয়া এখন ইউক্রেনের পাঁচভাগের একভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এই এলাকার বড় অংশ দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন