ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ধরে শি জিন পিংয়ের কাছে নিয়ে এলেন নরেন্দ্র মোদি; পুতিন হাত রাখলেন শির কাঁধে, কিছু একটা বললেন, তাতে হাসিতে ফেটে পড়লেন মোদি, সেই হাসি সংক্রমিত শি-তেও। তারপর মোদি আঙুল তুলে বললেন কিছু, তাতে সায় দেওয়ার ভঙ্গিতে তার হাত নিজের মুষ্টিতে পুরে নিলেন পুতিন। এরপর হাত নেড়ে নেড়ে মোদি পুতিনকে কিছু বোঝাতে বোঝাতে সামনে এগিয়ে চললেন, নিশ্চল দাঁড়িয়ে তা দেখলেন শেহবাজ শরিফ। গত রোববার চীনের বন্দরনগরী তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সরকারপ্রধানের অংশগ্রহণের এ দৃশ্য চলমান বৈশ্বিক রাজনীতির দৃশ্যপট অনেকটাই বলে দিচ্ছে। চীনের এ সম্মেলন আয়োজন দেখে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো এরই মধ্যে শঙ্কার সুরে বলতে শুরু করেছে, তাদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কীভাবে দেশগুলোকে চীনের বলয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চীন এ সুযোগে বিশ্বে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নিজের অবস্থান পাকা করতে চাইছে।
ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার তিন মাস পরই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে বিশ্বের প্রায় সব দেশকে বিরূপ করে তোলেন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া তো নানা নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে আগে থেকে; চীনের পণ্য বড় অঙ্কের শুল্ক চড়িয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়া থেকে তেল কেনায় সব শেষ ভারতের ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন তিনি।এতে রুষ্ট হয়ে মোদি তার একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ট্রাম্পের ফোনই যখন ধরছেন না বলে খবর আসছে, তখন চীনের এসসিও সম্মেলনে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, যেখানে এ জোটের আগের সম্মেলন এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সাত বছর পর চীন সফরে গিয়ে মোদি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের ঝলক শেয়ার করে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘তিয়ানজিনে পারস্পরিক যোগাযোগ অব্যাহত! এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে মতবিনিময়।’
দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ভারত দীর্ঘদিনের বিরোধ ভুলে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশীদারিত্বের নতুন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঐক্যবদ্ধ উপস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিয়েছে। এ ঘনিষ্ঠতার পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনের প্রথম দিনে মোদি, পুতিন ও জিন পিংকে একান্ত আলোচনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে। তাদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মোদি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে তিয়ানজিনে কথোপকথন সবসময়ই অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ। এসসিও সম্মেলন বহুত্ববাদী ও ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব গড়তে পথপ্রদর্শক হবে।’ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্মেলনে বলেন, ‘এসসিও সদস্য দেশগুলোর বিশাল বাজার ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানি, অবকাঠামো, সবুজ শিল্প, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও জানান, চীন এসসিও সদস্য দেশগুলোর জন্য ২৮ কোটি ডলারের সহায়তা এবং ১০ বিলিয়ন ইউয়ান ঋণ প্রদান করবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন