ঢাকা মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫

পাইপলাইনে ঢাকায় পরীক্ষামূলক জ্বালানি পরিবহন শুরু

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আগামীকাল বুধবার থেকে এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও তা দুই দিন এগিয়ে এনেছে বিপিসি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) যুগ্ম সচিব ড. এ কে এম আজাদুর রহমান বিষয়টি রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আশা করা হচ্ছে ২০ তারিখের মধ্যে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। বিপিসির চেষ্টা থাকবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে উদ্বোধন করার। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উদ্বোধন করবেন।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন,  এরই মধ্যে প্রকল্পের ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করেছে বিপিসি। প্রকল্পের অংশ হিসেবেই পরীক্ষামূলক পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু হয়েছে। কার্যক্রম পুরোদমে চালু হলে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে সরবরাহ করা হবে ২৭ লাখ টন ডিজেল। এর মাধ্যমে সরকারের বছরে ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

বিপিসি থেকে জানা গেছে, আগামী ৭ মে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে তেল পরিবহন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল থেকেই জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু করা হয়। এই পরীক্ষামূলক পরিবহন আগামী ৭ থেকে ১০ দিন চলবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কিছু ভুল-ত্রুটি ধরা পরে সেগুলো সংশোধন করা হবে। এর পর মূলত পুরোদমে তেল পরিবহন শুরু হবে। তবে তার আগে পাইপলাইনের উদ্বোধন করা হবে। বিপিসির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেল পরিবহনের এই পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। আরেকটি অংশ গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত।

পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে অনুমোদন পায়। শুরুতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু করতেই ২০২০ সাল লেগে যায়। পরে প্রথম দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় আবারও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

জানা গেছে, শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়।

প্রকল্প মূল্যায়নে বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। এতে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। এই হারে আয় হলে আগামী ১৬ বছরের মধ্যে প্রকল্পের বিনিয়োগ উঠে আসবে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়।

এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে। খরচ আর ভোগান্তি কমাতেই এই পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে।