ঢাকার মধ্যবাড্ডায় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ও গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যার ঘটনার প্রায় এক মাস হলেও এখনো কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে তা-ও জানতে পারেনি। সব মিলিয়ে এই হত্যা মামলা নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না। তবে হত্যার রহস্য বের করতে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও র্যাব মাঠে নেমেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নতুনভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।
থানা পুলিশের একটি সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত শেষে ধারণা করা হচ্ছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কোন্দলের কারণে বিএনপি নেতা সাধনকে হত্যা করা হয়। এ জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে। যাতে করে তাদের চেনা না যায়। দুর্বৃত্তরা সাধনকে হত্যার পর গাঢাকা দিয়েছে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কারা, হত্যার নেপথ্যে কে কিংবা কেন সাধনকে হত্যা করা হয়েছেÑ এসব বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশায় রয়েছেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ খুঁজতে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কাজ করছে।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধনকে যারা হত্যা করেছে তারা এলাকার কেউ নয়। ভাড়াটে কিলার দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সাধনকে দুজন অস্ত্রধারী সরাসরি গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করেছে। তবে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা কিলিং মিশনে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. মহিতুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএনপি নেতা সাধন হত্যার ঘটনায় জোরালো তদন্ত চলছে। তা ছাড়া অপরাধীরা ভাড়াটে কিলার। এখনো তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের বিশেষ বিশেষ টিম কাজ করছে।
জানা যায়, নিহত বিএনপি নেতা সাধন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। গত ২৫ মে রাত ১০টার দিকে মধ্যবাড্ডার গুদারাঘাটের একটি চায়ের দোকানে ৪-৫ জন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মাস্ক পরা দুই যুবক এসে সাধনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি সাধনের ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, বুক ও পেটে লাগে। পরে বন্ধুরা উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সাধনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় সাধনের স্ত্রী দিলরুবা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত সাধন নিঃসন্তান ছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে মধ্য বাড্ডা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তিনি ইন্টারনেট ব্যবসার পাশাপাশি ঠিকাদারির কাজ করতেন।
বিএনপি নেতা সাধন হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও তার বন্ধু মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রায়ই গুদারাঘাটের ওই চায়ের দোকানের সামনে বসে আড্ডা দিতাম। সেদিন রাতে আমরা সেখানে বসার পর পর দুজন অস্ত্রধারী এসে সরাসরি সাধনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই খুনিরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, নিহত সাধন ও আমি একই বাসায় থাকি। তার সঙ্গে কারো কোন্দল আছে কি না বা কেউ হুমকি দিয়েছিল কি না, আমার জানা নেই। তবে তিনি যেহেতু রাজনীতি করতেন, তাই অনেকের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল।
এ বিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, বিএনপি নেতা সাধন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা ছায়াতদন্ত করছি। বলার মতো এখনো তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
তবে আশা করছি, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় আমাদের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা কাজ করছেন।
ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। আপাতত তদন্ত চলছে, বলার মতো পরিবেশ হয়নি। তবে আমাদের টিম অপরাধীদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, আপাতত এই মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, খুনিরা ভাড়াটে। সেটা না হলে কেন তাদেরকে এলাকার কেউ চিনছে না?

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                    -20251031020255.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন