জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে। গোপালগঞ্জকে মুজিববাদমুক্ত না করে ঘরে ফিরব না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের ঐতিহাসিক জনতা ব্যাংকের মোড়ে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এই আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের রাজনীতি আর দেখতে চায় না। একই সঙ্গে গোপালগঞ্জ নিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক বিবৃতিতে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে লিখেছেন, পুরো বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট, গোপালগঞ্জের প্রতিও আমাদের সেই কমিটমেন্ট। গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্যের আমরা বিরোধিতা করি। গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব।
ফরিদপুরের পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরেরা গোপালগঞ্জকে সন্ত্রাসের আস্তানা বানিয়েছে। সেই আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট তৈরি হতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দ্রুত বিচার না করলে গোপালগঞ্জে আমরা শিগগির লংমার্চ করব। এবার গোপালগঞ্জকে আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদমুক্ত করে ফিরে আসব।’ এ সময় গোপালগঞ্জে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা না করার জন্য সরকারের কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জে আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আক্রমণ চালানো হয়েছে। গোপালগঞ্জের ফ্যাসিস্টরা তাদের আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলেছে। আমরা গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষকে মুজিববাদ থেকে মুক্ত করে ছাড়ব।’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নাহিদ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষকে যেন হেনস্তা না করা হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এই আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের রাজনীতি আর দেখতে চায় না। কিন্তু ভারতের সেবাদাস ওই দালাল ও দোসররা চুপিসারে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ওরা বলে, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নাকি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’ তিনি বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে রাতের ভোটে ডামি নির্বাচন করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আর কোনো সুযোগ পেতে পারে না।
পথসভায় জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নীলিমা দৌলার সভাপতিত্বে এবং সারজিস আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেনÑ এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুব যুগ্ম উইং মাজহারুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ, মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটে পথসভা সমাপ্ত হয়। দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে গতকাল ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জে কর্মসূচি পালন করে এনসিপি।
এদিকে, গোপালগঞ্জের গত বুধবারের পরিস্থিতির জন্য সরকার ও প্রশাসনকেও দায়ভার নিতে হবে বলে নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাইনি। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালায় আমাদের ওপর। যে রকমটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সব সময় একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরেও ৫ আগস্টের পরে অনেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয় আর, এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ৫ আগস্টের পরে আমরা বহুবার বলেছি, আমরা আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় জুলাই গণহত্যার বিচার চাই। কিন্তু ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার হলেও কোর্টে জামিন নিচ্ছে, থানা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। ’
নাহিদ বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে আছে ফ্যাসিবাদের দোসর এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, যাদের টাকা দিয়ে কিনে ফেলা যায়। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার নেতাকর্মীরা গতকাল গোপালগঞ্জে ছিল। তিনি বলেন, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, সকালের নাশকতার পরেও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পেয়েই আমরা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি। পদযাত্রা করিনি, পথসভা করেছি শুধু।
গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করেছি। যাওয়ার পথে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তাবাহিনী যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, আমরা সেভাবে সেখান থেকে বের হয়েছি। আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-কে আমরা সমর্থন করি না, প্রত্যাশা করি না।
সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিত, তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এর দায়ভার সরকার ও প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারা দেশে এ গ্রেপ্তার অভিযান চালাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা কমিট করেছিলাম, আমরা গোপালগঞ্জে যাব। আমরা গেছি এবং শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে ঘোষণা করছি যে মুজিববাদকে গোপালগঞ্জ ও বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না। আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। আমরা জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেকটা উপজেলায়, প্রত্যেকটা গ্রামে কর্মসূচি করব। গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না, বাংলাদেশপন্থিদের হবে। শহিদ বাবু মোল্লার গোপালগঞ্জ, শহিদ রথীন বিশ্বাসের গোপালগঞ্জকে আমরা পুনরুদ্ধার করব। মকসুদপুরে, কোটালীপাড়ায় আমাদের শহিদদের কবর রয়েছে। এ মাটি মুজিববাদীদের হতে দেব না। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও মুজিববাদীর হবে না। যারা গতকালের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, রাস্তায় নেমেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
আপনার মতামত লিখুন :