ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে গড়ে উঠেছে অপরাধ সাম্রাজ্য

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০৩:৩৮ এএম

পাবনার চাটমোহর পৌর এলাকা ও আশপাশে নীরবে গড়ে উঠেছে এক ভয়াবহ অপরাধ চক্র, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মধু চক্র’ নামে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রেমের অভিনয়, মাদক ও ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করে দিচ্ছে এই সংঘবদ্ধ চক্র। ভয়ঙ্কর এই সামাজিক ব্যাধির বিস্তার ক্রমেই উদ্বেগজনক মাত্রা নিচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

চক্রটি মূলত উঠতি বয়সি ছাত্রীদের ব্যবহার করে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে টার্গেট করা ছেলেদের ডেকে নেওয়া হয় শহরের রেস্টুরেন্টের ‘কাপল রুম’ বা নির্জন কোনো স্থানে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া থাকে চক্রের অন্য সদস্যরা। হঠাৎ করে তারা প্রবেশ করে ভয় দেখানো, মারধর, মোবাইল ছিনতাই ও টাকা আদায়ের মতো ঘটনা ঘটায়।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই চক্রে জড়িয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। প্রেমের অভিনয় ছাড়িয়ে এখন তারা অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করছে এবং তা ব্যবহার করছে ব্ল্যাকমেইলের জন্য। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
চাটমোহর পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ‘রুহানা’ (ছদ্মনাম) ও ‘রোশনী’ এই চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। স্থানীয় বখাটে যুবকদের সঙ্গে মিলে তারা শিক্ষার্থীদের অপরাধে যুক্ত করছে।

ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রথমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে আদায় করা হয় ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও। পরে এই উপাদান ব্যবহার করেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল।
চাটমোহরের চৌধুরীপাড়া, হারানমোড়, পুরাতন বাজার, নতুন বাজার, বালুচর মহল্লাসহ কয়েকটি এলাকায় গড়ে উঠেছে এই চক্রের আস্তানা। এসব এলাকার অনেক রেস্টুরেন্টের কাপল রুম অপরাধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত অনেকেই শহরের বাসাবাড়িতে গোপনে মাদক সেবন ও যৌনাচারে লিপ্ত। কেউ চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে তাদের গোপন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আজীবন নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।

চক্রের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক অবসাদে ভুগছে। স্থানীয়রা জানান, কয়েকজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছে। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

চাটমোহরের এক যুবক ইমরান হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার কথিত প্রেমিকা আমাকে শহরের এক রেস্টুরেন্টে ডাকে। সেখানে একান্তে সময় কাটানোর সময় হঠাৎ কয়েকজন যুবক ঢুকে মারধর করে এবং মোবাইল নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রেমিকাও তখন টাকা দাবি করে। আমি কোনোমতে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচি।’
চাটমোহর সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’

চাটমোহর থানার ওসি সনজুরুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিটি স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ ও কাউন্সেলিং চলছে। মাদকবিরোধী অভিযানও চলছে নিয়মিত। এই নতুন তথ্য যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’