জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সম্মুখ সারির তরুণ যোদ্ধাদের নিয়ে নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে দেশের আপামর জনতা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নানান বিতর্কে তরুণ নেতৃত্বের ইমেজ ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
অনেক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বা অবৈধ আর্থিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া অভিযোগ উঠছে খোদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়কের বিরুদ্ধেও। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার ও বিতর্কের অবসান না ঘটালে অচিরেই দেশের মানুষের কাছে তারা গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
সম্প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। আলোচিত নেত্রী নীলা ইস্রাফিল এনসিপিতে অপরাধীর বিচার হয় না এমন অভিযোগ এনে দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে পদত্যাগ করতে দেখা গেছে এনসিপির অনেক নেতাকে। যাদের অনেকেই বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যেই বক্তব্য রেখেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের বছর না পেরোতেই এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘অভুত্থানের পরপরই এনসিপি গঠিত হয়। নতুন দলটি ঘিরে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের আশার বলয় তৈরি হয়। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অবস্থায় দেশের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশকে একটি নতুন বন্দোবস্তের দিকে ধাবিত করার কথা ছিল। দলটি প্রতিষ্ঠার সময় অন্যতম লক্ষ্যই ছিল চলমান ব্যবস্থার সংস্কার করা এবং সংস্কারের বার্তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নেতাকর্মীদের কার্যকলাপ মনিটরিং করা সম্ভব নয়। তবে, দলের পদ দেওয়ার সময় অবশ্যই যাচাইবাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তা না হলে যে জন-আকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করছে, সেখানে তারা পৌঁছাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই জটিল। সেখান থেকে এনসিপিও মুক্ত নয়। ফলে, তারাও অনেক চাপের মধ্যে পড়েছে। একই সঙ্গে, এনসিপির মধ্যে যে সমস্যাগুলো দৃশ্যমান হয়েছে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে না পারলে তাদের নতুন বন্দোবস্ত বাধার মুখে পড়বে বলে ধারণা করি।’
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সমন্বয়কেরা বৈষম্যবিরোধী কথা বললেও নিজেরাই বৈষম্য করছে। তাদের কিছুসংখ্যক নেতা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও তদবির বাণিজ্যে জড়িত হয়ে পুরো আন্দোলনের নেতাদের ইমেজ নষ্ট করছেন। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশানে সাবেক এক এমপির বাসায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের এই সংগঠন। সমালোচনার মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। চলমান এই সমালোচনায় রীতিমতো ‘ঘি ঢালা’র পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সংগঠনটির সাবেক মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার কয়েকটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে।
তিনি বলেন, জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে। দীর্ঘ এক ফেসবুক লাইভে সংগঠনটির সাবেক এই নেত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই গিয়েছি। ৫ আগস্টের পরদিন সকালবেলা থেকেই দেখি, সমন্বয়ক পরিচয়ে নাকি একেকজন একেক জায়গায় গিয়ে দখল করছে! আমি একরকম অবাক হয়ে যাই যে গতকাল পর্যন্ত তো সমন্বয়ক পরিচয়টা দিতেই চাইছিল না আর আজকে থেকে শুনছি সবাই সমন্বয়ক এই পরিচয়ে চাঁদাবাজি-দখল চলছে। ...আমার মনে হচ্ছিল, এখন কি রক্ষীবাহিনীর মতো সমন্বয়ক বাহিনী তৈরি হচ্ছে!’
এ ছাড়া এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দলটির আলোচিত নেত্রী নীলা ইসরাফিল অভিযোগ করেন, এনসিপিতে অপরাধীর বিচার হয় না। ফেসবুক পোস্টে নীলা ইসরাফিল বলেন, তিনি এনসিপিকে ‘নীতিহীন’ এবং ‘প্রত্যাখ্যাত’ দল হিসেবে উল্লেখ করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন নেতা গত কয়েক মাসে নানা ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন। যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে গত এপ্রিলে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডির একটি বাড়িতে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে মব হামলার পর আটককৃতদের থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে আলোচনায় এসেছিলেন এনসিপির আরেকজন নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ। তাকেও গত মে মাসে ওই ঘটনার পর দল থেকে শোকজ করা হয়েছিল।
এর আগে গত বছরের আগস্টের পর থেকে সারা দেশেই সমন্বয়ক পরিচয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন, চাঁদাবাজি, তদবিরসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাভারে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দের পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি দলবল নিয়ে একটি বাড়িতে তল্লাশির জন্য গিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন।
গত বছরের ডিসেম্বরের প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে করা এক মামলায় ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। এই প্ল্যাটফর্মের রংপুরের এক নেতার গত মার্চ মাসে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও ও অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে খুলনা নগরীতে একটি বাড়িতে ঢুকে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি ও সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
ছাত্রনেতাদের নানান অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম জানান, জুলাই আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নানা ধরনের মানুষ একসঙ্গে হয়েছে এবং তখন অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সবাইকে চেনা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ঠিকাদারি লাইসেন্সে ইস্যুতে আলোচনায় আসার পর ছাত্র প্রতিনিধি ও অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার বাবা ইয়াকুব আলী ভুঁইয়ার ‘ভুলের জন্য’ ক্ষমা চান। তবে আবারও আলোচনায় এই তরুণ উপদেষ্টা বাবার ঘটনা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে এলাকাছাড়া করেছেন তিন পরিবারকে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লার মুরদনগরের বাসিন্দা রিক্তা আক্তার, শিখা রানী, মোহাম্মদ আলীসহ স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দলীয় পরিচয় ও ক্ষমতার ছত্রছায়ায় আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া প্রতিবেদনে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর একই এলাকার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে আরও একটি ঘটনাও উঠে আসে।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানীর অভিযোগ, ওই দিন তাকে স্কুলের একটি কক্ষে আটকে রেখে প্রথমে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হলে একপর্যায়ে তার ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। পরে তাকে স্কুল থেকে বের করে ঘোরানো হয় গ্রামের প্রধান সড়কগুলোয়, যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ভিডিওতে শিখা রানীকে হেনস্তাকারীদের দলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসাইনকেও দেখা যায়। এদিকে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।
এদিকে আলোচনায় এসেছে ছাত্রশিবিরের নেতা সাদিক কায়েমের সাম্প্রতিক এক টকশোর একটি বক্তব্যকে ঘিরে।
সেখানে তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গঠন প্রক্রিয়ায় ছাত্রশিবির সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের নির্দেশেই কাজ করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। যদিও সাদিক কায়েমের এই দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে বলেন, ‘শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন, ছাত্রশক্তির গঠন প্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্রের সঙ্গে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সঙ্গে জাবির একটা স্ট্যাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সব পক্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সে কারণে ঢাবি শিবিরের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। দ্বিতীয়ত, সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে।’
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতা নাহিদ ইসলাম ২০২৩ সালের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব ছিলেন।
সমাজ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির অনেকেই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক ও সমালোচিত প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থার প্রভাব দৃশ্যমান নয়। পূর্ব বোঝাপড়া করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে তা কোনো পরিবর্তনও আনবে না। কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না নিলে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করি।’

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
       -20251031234404.webp) 
        
        
        
       -20251031233315.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন