উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ভালো একটি নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। এখন সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।
সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রেস সচিব বলেন, ‘বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।’ বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন বলে তিনি জানান।
শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ৫ আগস্ট তাদের সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে গত বুধবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আজ (গতকাল) থেকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। তবে একই সময়ে সংস্কার ও বিচারের কাজ চলবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দুটি অভিনন্দন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে’ বলে জানান শফিকুল আলম।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানোতে ভূমিকা রাখায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে অভিনন্দন জানানো হয়। বলা হয়, শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে বাণিজ্য উপদেষ্টা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকেও অভিনন্দন জানানো হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করায় তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মোট ৩১৫টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৭টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা শতাংশে ৭৮ দশমিক ৪১ ভাগ। স্বাধীনতার পর এটা যেকোনো সরকারের জন্য রেকর্ড।’ শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘১১ সংস্কার কমিশন যে ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ করেছিল, এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬টি বাস্তবায়িত হয়েছে। ৮৫টি আশু বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াধীন। ১০টির আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর ১০টি বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’
শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর নামে পুরস্কার চালু হচ্ছে: মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর নামে পুরস্কার চালু হচ্ছে বলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান। তিনি বলেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে দুজন শিক্ষক এবং একজন আয়া রয়েছেন। তাদের সম্মাননা দেওয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর নামে পুরস্কার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পুরস্কার চালু করবে।’ মাহেরীন চৌধুরীর আত্মদান স্মরণীয় করে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম।
গাজীপুর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বাতিল: প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘গাজীপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য দাবি রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গাজীপুর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ইউনিভার্সিটি অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ নাম রাখা হয়েছে।’
জুলাই শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে বিধি: জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের জন্য সুষ্ঠুভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি বিধি করা হচ্ছে বলেও জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘শহিদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে গিয়ে বিতর্ক দেখা দিচ্ছে। শহিদের স্ত্রী কত টাকা পাবেন, মা-বাবা কত টাকা পাবেন, বিধিতে তা উল্লেখ থাকবে’ বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :