ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ২০২ রানে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই বিশাল জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতল তারা। এতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৪ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জয়ের খরা কাটিয়ে ওঠে ক্যারিবীয়রা। অধিনায়ক শেই হোপের সেঞ্চুরি ও শেষের তা-বের পর ৬ উইকেট শিকার করেন জেডেন সিলস। তাতেই বিশাল জয় পায় ক্যারিবিয়ানরা। এর আগে ১৯৯১ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল রিচি রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। তারপর থেকে দুই দলের ১১টি ওয়ানডে সিরিজের একটি শেষ হয়েছিল সমতায়। টানা ১০টি সিরিজ জিতেছিল পাকিস্তান।
ত্রিনিদাদে মঙ্গলবার ২৯৪ রানের পুঁজি গড়ার পর পাকিস্তানকে স্রেফ ৯২ রানে গুটিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ওয়ানডেতে এই নিয়ে চারবার ২০০ বা এর বেশি রানে জিতল ক্যারিবিয়ানরা। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে এই ম্যাচের চেয়ে তাদের বড় জয় আছে আর একটিই, ২০১৪ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৩ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই জয়ের নায়ক অধিনায়ক শেই হোপ। ১৮তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৪ বলে অপরাজিত ১২০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান ৩১ বছর বয়সি কিপার-ব্যাটসম্যান। বল হাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন জেডেন সিলস। দুর্দান্ত প্রথম স্পেলে পাকিস্তানের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেওয়া ২৩ বছর বয়সি পেসার ১৮ রানে শিকার করেন ৬ উইকেট। এই সংস্করণে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেরা বোলিং এটি। ১৯৮১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিংসটনে ১৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন কলিন ক্রফট। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে হেডিংলিতে ৫১ রানে ৭ উইকেট নিয়ে চূড়ায় আছেন উইনস্টন ডেভিস। পাকিস্তানের ইনিংসে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হন আটজন। এর মধ্যে পাঁচজন আউট হন শূন্য রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের শুরুটা যদিও ছিল মন্থর। প্রথম ৩০ ওভারে স্বাগতিকদের রান ছিল কেবল ১১০। পরের ১০ ওভারে আসে ৬৫, শেষের ১০ ওভারে ১১৯। শেষ ৭ ওভারেই ঠিক ১০০ রান তোলে তারা। হোপের সঙ্গে জাস্টিন গ্রেভসের অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটে জুটিতে ১১০ রান আসে স্রেফ ৫০ বলে। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন গ্রেভস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভীষণ কঠিন এক সময়ে এলো এই সাফল্য। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা আট ম্যাচ হারার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরাজয়, এরপর প্রথম ওয়ানডেতেও হেরে বসে তারা।
বিপর্যয় কাটানোর পথ খুঁজতে ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেইন্স, শিবনারায়ণ চান্দারপলের মতো গ্রেটদের সঙ্গে নিয়ে জরুরি এক ‘স্ট্র্যাটেজিক মিটিং’ ডাকে ক্যারিবিয়ান বোর্ড। সেই সভার প্রথম দিনেই বৃষ্টিবিঘিœত দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় ড্যারেন স্যামির দল। শেষ ম্যাচে তো পাকিস্তানকে স্রেফ গুঁড়িয়ে পুরোনো দিনের ঝলক দেখাল তারা। ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শাহিন শাহ আফ্রিদির জায়গায় পাকিস্তানের একাদশে ফেরা নাসিম শাহর বাড়তি বাউন্সে ব্র্যান্ডন কিং স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তৃতীয় ওভারে। মন্থর শুরুর পর হুসাইন তালাতকে একই ওভারে ২টি ছক্কা মেরে গা ঝাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেন এভিন লুইস। কিন্তু পরের ওভারেই শেষ হয় তার ৫৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচে ৪২ বলে ১৬ রানের পর এবার ৪৫ বলে ১৭ রানের আরেকটি শম্বুক গতির ইনিংস খেলেন কেসি কার্টি। শেরফেন রাদারফোর্ড ১৫ রান করতে খেলেন ৪০ বল। তার বিদায়ের সময় ৩০.৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৪ উইকেটে ১১৩।
রানের গতি বাড়ে মূলত চেইস উইকেটে যাওয়ার পর। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। হোপের সঙ্গে তার পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৪ রান আসে ৬০ বল থেকে। গুডাকেশ মোটি টিকতে পারেননি। তার বিদায়ের পরই শুরু হয় হোপ ও গ্রেভসের তা-ব। মোহাম্মদ নাওয়াজকে টানা ২ ছক্কার পর লেগ স্পিনার আবরারের একই ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন হোপ। নাসিমকে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ৮৩ বলে। ডেসমন্ড হেইন্সকে (১৭) পেছনে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় এককভাবে ৩ নম্বরে উঠলেন হোপ (১৮)। আর ১টি সেঞ্চুরি করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন ব্রায়ান লারাকে।
চূড়ায় আছেন ক্রিস গেইল (২৫)। হোপের ২টি বাউন্ডারি ও গ্রেভসের ১টি করে চার-ছক্কায় নাসিমের পরের ওভারে আসে ২১ রান। হাসান আলির শেষ ওভারে আসে ১৩। রান তাড়ায় প্রথম ওভারে সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাইম আইয়ুব। সিলসের পরের ওভারে পরপর দুই বলে বিদায় নেন আবদুল্লাহ শাফিক ও অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। তিনজনের কেউ পাননি রানের দেখা।
প্রায় দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি না পাওয়া বাবর আজম প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও সফল হননি (২৩ বলে ৯)। তাকে এলবিডব্লিউ করে চতুর্থ শিকার ধরেন সিলস। প্রথম স্পেলে তার বোলিং ফিগার ছিল ৫-০-১২-৪! পঞ্চম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েন সালমান আলি আগা ও হাসান নাওয়াজ। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি। সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন সালমান। নাসিমকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সিলস। পরের ওভারে হাসানকে বোল্ড করে ষষ্ঠ উইকেটের দেখা পান তিনি। ওই ওভারেই আবরারের রানআউটে ম্যাচের সমাপ্তি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জয়ের আনন্দ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন