শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৬:০৭ এএম

সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে  রাজি না হওয়ায় গুম করে  ভারতে ৫ বছর বন্দি রাখে : সুখরঞ্জন বালি

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৬:০৭ এএম

সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে  রাজি না হওয়ায় গুম করে  ভারতে ৫ বছর বন্দি রাখে : সুখরঞ্জন বালি

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গুম করে ভারতের দমদম কারাগারে পাঁচ বছর বন্দি করে রাখার অভিযোগ করেছেন সুখরঞ্জন বালি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা এই অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তিনি এই অভিযোগ করেন। সুখরঞ্জন বালির ভাই বিশা বালিকে হত্যার দায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ- দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আমলে বিচার করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে আপিল করলে তাকে আমৃত্যু কারাদ- দেওয়া হয়।

ব্যাপক আলোচিত সুখরঞ্জন বালির গতকালের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও এস কে সিনহা ছাড়াও যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেনÑ বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল, সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, তদন্ত সংস্থার সাবেক প্রধান মো. সানাউল হক ও পিরোজপুরের সাবেক পিপি আলাউদ্দিনসহ জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা।

অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এবং সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসার কারণে আমাকে গুম, অপহরণ, নির্যাতন এবং প্রায় পাঁচ বছর ভারতে অবৈধভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। আমার ভাই বিশা বালিকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে।

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে জোর করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাকে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলে ডেকে ’৭১-এ আমার ভাই বিশা বালি হত্যাকা-ের বিষয়ে জানতে চায়। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। কিন্তু হেলাল উদ্দিন আমাকে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী হিসেবে প্রকৃত হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলে এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলে। আমি হেলাল সাহেবকে তখনই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিই যে, সাঈদী হুজুর আমার ভাই বিশা বালি হত্যাকা-ের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল আমাকে জোরপূর্বক রাজি করাতে সেখানেই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। এরপর হেলাল উদ্দিন আমাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি করাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি এ কে এম আব্দুল আউয়াল, পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেককে ডেকে আনেন। তারা আখতারুজ্জামান ফুলু ও কানাই লাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে সাইদুল্লাহ লিটন, রেজাউল করিম শিকদার মন্টু, মিজানুর রহমান তালুকদার, সুমন সিকদার, দিলীপ মাঝি, রাজ্জাক খান বাদশা, মতিউর রহমান মৃধা, শাহজাহান খান তালুকদার, মাসুদ আহম্মেদ রানা, শেখ ফিরোজ আহম্মেদ, গোলাম মাওলা নকিব, আমিনুল ইসলাম মিরন, ইরতিজা হাসান রাজু, খায়রুল ইসলাম মিঠু, মজনু তালুকদার, মৃধা মো. মনিরুজ্জামান, কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ রাজাসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের আরও কিছু লোককে রাজলক্ষ্মী স্কুলে হাজির করায়। তারা সেখানে উপস্থিত হয়েই আমাকে নানা রকম চাপ ও হুমকি দিতে থাকে।
‘আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে আমাকে নির্দয়ভাবে পেটায়। পরে আমি আত্মগোপনে চলে যাই।

অনেক দিন পর সাঈদী হুজুরের ছেলে মাসুদ সাঈদী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিশা বালি হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। তিনি আমার ভাইয়ের হত্যার প্রকৃত ঘটনা ট্রাইব্যুনালে এসে বলার জন্য অনুরোধ জানান। আমি তার অনুরোধ গ্রহণ করি এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাক্ষ্য দিতে রাজি হই। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের মূল গেটের কাছে আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছালে পুলিশ আমাদের গাড়ি আটকে দেয়। আটকে দেওয়ার পর সামনের গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ সাঈদী পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদা পোশাকে থাকা অনেক লোক এবং পুলিশ মিলে অ্যাডভোকেট মিজান স্যারের গাড়ি ঘিরে ফেলে। সেখানে আমাকে দেখে তারা বলে, ‘শুয়োরের বাচ্চা, তোকেই তো আমরা খুঁজছি। নাম, নাম।’ এই কথা বলেই একজন পুলিশ আমার কানের নিচে প্রচ- জোরে থাপ্পড় মারে। এরপর আমার শার্টের কলার ধরে আমাকে মারতে মারতে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা সাদা রঙের পুলিশ পিকআপে তুলে নেয়।’

সুখরঞ্জন আরও বলেন, ‘গাড়িতে উঠিয়েই তারা আমার চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে। এ অবস্থাতেই তারা আমাকে অজানা একটি স্থানে নিয়ে যায়। এটি ছিল একটি জানালাবিহীন অন্ধকার ঘর, যেখানে প্রায় দুই মাস আমাকে বন্দি রাখা হয় এবং খাবার ও আলো থেকে বঞ্চিত করে প্রচ- শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে আমাকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ক্যামেরা ও আলো ছিল। সেখানে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাওয়া হয়। আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই যে, আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে সাঈদী হুজুরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আমি প্রকৃত হত্যাকারীদের চিনি এবং তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি তাদের কথামতো সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে দিনের পর দিন বৈদ্যুতিক শক, শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে।

তারা আমাকে কোটি টাকা ও একটি বাড়ি দেওয়ার প্রলোভনের মাধ্যমে আমার মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তাতেও রাজি না হওয়ায় আমাকে প্রায় দুই মাস ওই গোপন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাদের চরম নির্যাতনের মুখে আমি অসুস্থ ও অজ্ঞান হয়ে পড়লে আমাকে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

একদিন আমাকে চোখ বেঁধে একটি গাড়িতে তোলা হয় এবং কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর যখন গাড়ি থামে, তখন আমি বাথরুমে যাওয়ার কথা বললে তারা আমার চোখ খুলে দেয়। তখন দেখতে পাই, আমাকে সীমান্ত এলাকায় আনা হয়েছে, যেখান থেকে বিজিবির সহায়তায় বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমাকে বশিরহাট সাবজেলে ২২ দিন রাখার পর সেখান থেকে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে আমাকে পাঁচ বছর আটক রাখে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!