রাত পোহালেই শোনা যাচ্ছে, কারো ঘর থেকে অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে, কারো বাড়ি থেকে গরু-ছাগল, কখনো গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার, কখনো পাওয়া যাচ্ছে না দোকানের মালামাল, আবার কখনো বাড়ির গেট থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। এভাবে প্রতিদিনই কানে আসছে একাধিক চুরির ঘটনা। এ কারেণ চুরির আতঙ্কে রয়েছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলাবাসী। চোরেরা সুযোগ বুঝে এক রাতেই ৩ থেকে ৪টি স্থানে চুরি করছে। যেন চোরদের চুরির নিরাপদ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে উপজেলায়।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সিদ্দিকের ফিডের দোকানে চুরি করতে এসে জনতার হাতে এক চোর আটক হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে, রাতে আরও তিন চোরকে আটক করে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার একই রাতে তিনটি দোকান ও একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। আর এভাবেই গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চুরির ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চুরি বেশি হচ্ছে উপজেলা শহরের দোকানপাট থেকে। গ্রামীণ বাড়িঘর ও দোকানপাটও বাদ যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মূলবান মালামাল, ব্যবসার পুঁজি হারানোসহ নিরাপত্তায়হীনতা আর হতাশায় দিন কাটছে উপজেলাবাসীর। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে চুরির আতঙ্ক।
স্থানীয়রা বলছেন, চুরির মালামাল উদ্ধার ও চোরদের গ্রেপ্তার না করায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। আবার নেশার টাকা জোগাড় ও পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের অভাবে হঠাৎ চুরি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন অনেকে। থানা পুলিশ বলছে, চুরির রহস্য উদঘাটনসহ চোরকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এখন প্রতিটি চায়ের দোকানে চুরির খবর ‘টপ অব দ্যা টাউন’। চোরদের কাছে পুলিশ যেন নির্বিকার, কোনোভাবেই চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। করতে পারছে না রহস্য উদঘাটন। এ কারণে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, গত বুধবার একই রাতে উপজেলার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শরিফুলের মুদি দোকান, উপজেলার মোড়ে সোহাগের চায়ের দোকান, বাজার এলাকায় মাসুদের মুদি দোকান এবং হঠাৎপাড়া এলাকার মজিদুলের বাড়ির ওয়াটার পাম্প চুরি হয়। এর আগে গত ১০ আগস্ট রাতে বাজার এলাকার সবচেয়ে বড় মুদি দোকান ‘লিটন ভ্যারাইটি স্টোর’-এর ইটের ১০ ইঞ্চি দেয়াল ভেঙে দোকান লুট করে নিয়ে যায় চোরের দল। এর দুই দিন পর বাজারের আরেক বড় মুদি দোকান ফারুক স্টোরের ওপরের টিন খুলে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। এ ছাড়া গত ৭ আগস্ট সবজি দোকানদার সুমন হোসেন তার পালসার মোটরসাইকেলটি দুপুরে বাড়ির দরজার সামনে রেখে ভাত খাচ্ছিল। পরে এসে দেখে মোটরসাইকেল নেই, চুরি হয়ে গেছে।
গত ২৮ জুলাই উপজেলার খাদ্যগুদামের সামনে সার্থক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাংবাদিক সানজাদ রয়েল সাগরের সিনজেনটা কম্পানির কীটনাশনের দোকানের ইটের দেয়াল ভেঙে মালামাল চুরি হয়। এর ৩-৪ দিন পর মথুরাপুর ইউপি সদস্য পরিমল চন্দ্রের বাড়ির লোহার গ্রিল কেটে মোটরসাইকেল ও গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এভাবেই গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরি হয়েছে উপজেলার মোড় ও বাজার এলাকায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সানজাদ রয়েল সাগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দোকান ভেঙে নগদ টাকা আর মালামাল নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ তো গভীর ঘুমে বিভোর। দেখি কবে পুলিশের ঘুম ভাঙে।’
আরেক ভুক্তভোগী সবজি ব্যবসায়ী সুমন হোসেন বলেন, আমার মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পর থানায় গিয়েছি জিডি করার জন্য। পুলিশ জিডি না নিয়ে অভিযোগ দিতে বলে। সেই মোতাবেক অভিযোগ লিখে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে জমা দিতে গেলে ওসি আমাকে বলেন, ‘আপনার কাছে যদি এক লাখ টাকা থাকে বাহিরে রাখবেন? টাকা আর গাড়ি একই জিনিস। গাড়ি বাড়ির বাহিরে রাখলেন কেন? এখন চুরি হয়েছে, সব দোষ পুলিশের হবে।’
মুদি ব্যবসায়ী শরিফুল হোসেন বলেন, ‘যেভাবে দিনের পর দিন চুরি হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমরা কীভাবে ব্যবসা করব। বারবার চুরির ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ জমছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে, চোরদের লাগাম টানবে কে? এভাবে চলতে থাকলে বদলগাছীর শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। কোনো কোনো গ্রামে চুরির ভয়ে মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে না। কেউ ঘুমাচ্ছে ঘরের উঠানে, আবার কেউ টর্চ লাইট হাতে পাহারা দেন। চোরের ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে জীবন।’
বদলগাছী থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, চুরির ঘটনায় মামলা হচ্ছে, আমরা চোর ধরতে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটন বা চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মালামাল উদ্ধার হয়নি, তবে আমরা আশাবাদী, খুব শীঘ্রই চোরসহ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার হবে। গত শুক্রবার চারজন চোর গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন