চাঁদাবাজির মামলায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিমকে (৫৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে সেলিমকে আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিংগাইর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে সেলিমের ব্যক্তিগত অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সেলিম উপজেলার বাইমাইল গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক সংসদ সদস্য মঈনুল ইসলাম খান শান্তর অনুসারী।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান সিদ্দিকীর দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় তার ছেলে পলাশসহ (২৬) অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান সিদ্দিকী ও সেলিম প্রায় ১০ বছর ধরে জমি কেনা-বেচার ব্যবসা করে আসছেন। শুরুতে তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন স্বাভাবিকভাবে চললেও পরবর্তী সময়ে সেলিম ও সুফিয়ানের মধ্যে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত শনিবার ব্যাবসায়িক কাজের উদ্দেশ্যে প্রাইভেট কারযোগে সুফিয়ান সিংগাইর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে পরিকল্পিতভাবে ওত পেতে থাকা সেলিম ও তার ছেলেসহ আ
রও ১৫-২০ জন তার গাড়ি প্রতিরোধ করে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা ওই ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে মারধর করে তার পরিহিত ২৫ লাখ টাকা মূল্যের রোলেক্স ঘড়ি ও গাড়ির ব্যাক ডালায় থাকা ১৫ লাখ নগদ টাকা চাঁদা নেয়। এ সময় আরও ৫ লাখ টাকার জন্য সুফিয়ানকে টেনেহিঁচড়ে সেলিমের ব্যক্তিগত অফিসে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকা শিমুল থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত সেলিমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সেলিমের ছেলে পলাশসহ অন্যরা।
ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, ওরা দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ওই দিন পরিকল্পিতভাবে আমার গাড়ির গতিরোধ করে। পরে ভয়ে আমি ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দিই। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে গ্রেপ্তার সেলিমের ছেলে পলাতক পলাশ জানান, সুফিয়ানের কাছে আমার বাবা ১৭১ শতাংশ জায়গা ও এক কোটি চল্লিশ লাখ টাকা পায়। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সমন্বয়ে সালিশি বৈঠকের রায়ে উভয় পক্ষের সম্মতির কপি আমাদের কাছে আছে। সুফিয়ান আমাদের টাকাও দিচ্ছে না এবং জমিও না দিয়ে ওই জমি অন্য জায়গায় বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। ওই জমি এবং টাকার জন্য তাকে চাপ দিলে তিনি এ নাটক সাজান। তার কাছ থেকে আমরা কোনো টাকা বা অন্য কোনো কিছু নিইনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।
সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেওএম তৌফিক আজম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে মূল আসামি সেলিমকে গ্রেপ্তার করি। তবে ছেলে পলাশসহ বাকিরা পালিয়ে যায়। সেলিমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন