দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার ১০৫টি পয়েন্ট দিয়ে অবাধে ঢুকছে মরণঘাতি ভয়ংকর সব মাদক। ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসব নেশাজাতীয় দ্রব্যের অনুপ্রবেশ ঘটছে দেশে। জল ও স্থল পথে দেদার আসছে ইয়াবা, হেরোইন, আইস, ফেনসিডিল, গাঁজা, টাপেন্টাডল, কোকেনের মতো ভয়াবহ মাদক। শুধু এই মাদকই নয়, ধনী দুলালদের প্রিয় এলএসডি ও পশ্চিমা মাদকও ঢুকছে এসব সীমান্ত দিয়ে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে বুঁদ হচ্ছে তরুণ সমাজ। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই উঠতি বয়সি তরুণীরাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আসা এসব মাদকদ্রব্য চোরাকারবারিদের মাধ্যমে কয়েক হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মাঝেমধ্যে মাদক কারবারিরা গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে কৌশল পরিবর্তন করে ফের জড়াচ্ছে ব্যবসায়। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন মূলহোতারা। মূলত মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত পথের অনেক জায়গা অরক্ষিত থাকায় মাদক কারবারিদের অপতৎপরতা থামানো যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মাদক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) তথ্যে দেশের মাদক পরিস্থিতির এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
ডিএনসি বলছে, আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের রুট ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ এবং ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট’-এর কেন্দ্রে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের সীমান্ত সংলগ্ন ১৮টি জেলার ১০৫টি পয়েন্ট মাদকের প্রধান রুট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (ইউএনওডিসি) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যত মাদক ঢুকছে, এর মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ছে।
ডিএনসির তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত যেসব মাদক উদ্ধার হয়েছে তা দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে আসছে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করা মাদকের মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ফেনসিডিল, টাপেন্টাডল ও ইস্কাফ সিরাপ এবং ইনজেকটিং ড্রাগ অন্যতম। এগুলো শহর থেকে গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে। কৌতূহল, পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুদের প্রচার, অসৎ সঙ্গ, নানা রকম হতাশা ও আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবে ছাত্র-ছাত্রীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ পশ্চিম ও উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, উত্তরে আসাম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে মেঘালয় এবং পূর্বে ত্রিপুরা ও মিজোরাম দ্বারা বেষ্টিত। দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের (বার্মা) সঙ্গে সীমানা রয়েছে। দেশে যে পরিমাণ মাদক প্রবেশ করছে এর ৮৮ শতাংশ আসছে ভারত থেকে, মিয়ানমার থেকে আসছে ৮ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে। দেশে প্রবেশ করা মোট মাদকের ১৭ শতাংশ ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় আসছে। বাকি ৮৩ শতাংশ মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। অল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রবণতা থেকে দেশের অসৎ লোকেরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।
মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ১৮টি জেলার ১০৫টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে ডিএনসি। এগুলো হচ্ছে- দেশের পশ্চিম সীমান্তের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া, দেবহাটা, ভোমরা, কাকডাঙ্গী ও পলাশপুর; যশোর জেলার বেনাপোল, পুটখালী, চৌগাছা, নারায়ণপুর, শার্শা এবং আশপাশের এলাকা; চুয়াডাঙ্গা জেলার কারপাশডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবননগর; মেহেরপুর জেলার দারিয়াপুর ও বুড়িপটা; রাজশাহী জেলার মনিগ্রাম, চারঘাট, সারদা, ইউছুফপুর, কাজলা, বেলপুকুরিয়া, হরিপুর, গোদাগাড়ি, বাঘা ও রাজশাহী সদর; চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট, শাহবাজপুর, বিনোদপুর, সোনা মসজিদ স্থলবন্দর ও কানসাট; জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি (প্রধান প্রবেশপথ) এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ি, বিরামপুর, হিলি, হাকিমপুর, কামালপুর, বিরল, আকাশকারপুর, খানপুর, দাইনুর, মালিগ্রাম ও বনতারা।
দেশের পূর্ব সীমান্তের সিলেট জেলার জকিগঞ্জ, চুনারুঘাট ও মাধবপুর; ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার করিমপুর, কসবা, আখাউড়া, সিংগারবিল, পাহাড়পুর ও বিজয়নগর; কুমিল্লা জেলার জগন্নাথ দিঘি, চৌদ্দগ্রাম, গোলাপশাহ, কালিকাপুর, জগন্নাথপুর, রাজাপুর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও বিবিরবাজার এবং ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম।
দেশের উত্তর সীমান্তের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি, রৌমারি, ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, বাঁশজানি, বলারহাট, বলাবাড়ি, কুটি চন্দ্রকোনা, পাথরডুবি ও নাখারগঞ্জ; লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর, আদিতমারি, কালিগঞ্জ, পাটগ্রাম ও বুড়িমারি; শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ি; ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া এবং নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর ও কমলাকান্দা।
দেশের দক্ষিণ সীমান্তের কক্সবাজার জেলার জালিয়াপাড়া, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, সাবরাং, সাউথপাড়া, ধুমধুমিয়া, জদিপাড়া, সাউথ হ্নীলা, লেদাপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নোয়াপাড়া, হোয়াইক্যং, তমরু, উখিয়া, কাটাখালী, বালিখালী, ঘুমধুম ও কাটাপাহাড়।
ডিএনসি, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধারকৃত মাদক, আসামি ও মামলার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১ কোটি ৩২ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৮ বোতল ফেনসিডিল, ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬৭ কেজি গাঁজা, ৩২ লাখ ৮ হাজার ৪২৭ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৫টি মামলায় ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৯ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারিভাবে দেশে ১ কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। বছরে মাদকের পেছনে খরচ হয় আনুমানিক ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক, ব্যবসায়ী, বাহক ও বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করে প্রায় ২ লাখ ব্যক্তি। প্রতি বছরই বাড়ছে এই সংখ্যা। বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। নেশাজাতীয় দ্রব্য বিস্তারের এই সর্বনাশা পরিস্থিতি আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতেও বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে ডিএনসি সূত্র জানিয়েছেন, সীমান্তের ১৮টি জেলার ১০৫টি পয়েন্টের মাদক কারবারি, গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা ধরে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাদকের প্রবাহ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্তের মাদক কেনা-বেচা ও সেবনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা প্রদান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিকল্প আত্মকর্মসংস্থানের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. ওমর ফারুক বলেন, ‘মাদকাসক্তের কারণে এক শ্রেণির তরুণ চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। এতে সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যেকোনো মূল্যে মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি’।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে আমার সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে থাকি। সেক্ষেত্রে মাদকের রুটের বিশেষ জোনগুলো আমাদের বাড়তি নজরদারিতে রয়েছে। যেমন-টেকনাফ দিয়ে ইয়াবার চোরাচালান ঘটে। এ কারণে টেকনাফকে আমরা একটা বিশেষ জোন হিসেবে ঘোষণা করেছি। সেখানে আমাদের আলাদা লোকবল রয়েছে। এ ছাড়া মাদক রোধে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সঙ্গে আমরা সমন্বিতভাবে চেকপোস্ট পরিচালনা করে থাকি। পাশাপাশি সীমান্তগুলোতে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘মাদক কারবারি, গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা রয়েছে। সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।
পুলিশ ও বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে নাফ নদীর ৮৪ কিলোমিটার জলসীমানা রয়েছে। দুর্গম এসব স্থান দিয়ে ইয়াবা, আইসের পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ আসছে। কিছু মাদক ও অস্ত্রের চালান ধরা পড়লেও অধিকাংশ পার পেয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও ডিএনসির অভিযানেও বিভিন্ন সময় মাদকের চালান ধরা পড়েছে। এরপরও বন্ধ হয়নি পাচার। চলতি বছরের জুলাই মাসে বিজিবি দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮১৬ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৩ কেজি ৪৫০ গ্রাম হেরোইন, ১৪০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৬৮৭ বোতল ফেনসিডিল, ৭ হাজার ৮৭০ বোতল বিদেশি মদ, ৩৩৪ লিটার বাংলা মদ, ৯৪১ বোতল ক্যান বিয়ার, ২ হাজার ২১ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ৮০ হাজার ৬৯৯টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৪ হাজার ৯৫৯ বোতল ইস্কাফ সিরাপ জব্দ করেছে।
গত ৩০ আগস্ট সুনামগঞ্জ সদরের ১ নম্বর জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে সীমান্তের উত্তর ডুলুরায় অভিযান চালিয়ে ১৩৫ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ করেছে বিজিবি। এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (২৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, ‘সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে’।
গত ১৯ আগস্ট দুপুরে নাফ নদীতে একটি বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ১ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়ন। বিজিবি জানায়, মিয়ানমারে মাদক কারবারিদের সাথে যোগসাজশে মাছ ধরার আড়ালে জেলের ছদ্মবেশে নাফ নদী দিয়ে মাদকের একটি বড় চালান বাংলাদেশে পাচারের চেষ্টা হবে। এমন খবরের ভিত্তিতে বিশেষ নৌ-টহল মোতায়েন করা হয়। এরপর বিজিবির সাবরাং বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় একটি সন্দেহজনক জেলে নৌকা শূন্যরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ১০০ গজ ভেতরে অবস্থান নেয়। অভিযানিক দলটি নৌকাটিকে ধাওয়া করলে নৌকায় থাকা দুই মাদককারবারি লাফ দিয়ে সাঁতার কেটে মিয়ানমারের ভেতরে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজিবির টহলদল ওই নৌকাটিতে তল্লাশি চালিয়ে মাছ ধরার জালের ভেতর লুকানো একটি প্লাস্টিকের প্যাকেটের ভেতর থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করে।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিসুর রহমান জানান, বিজিবি সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার, অবৈধ কার্যক্রম ও বিভিন্ন অপরাধ দমনে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবির জিরো টলারেন্স নীতি সবসময় অটুট থাকবে। একই দিন দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক অভিযানে ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকার মাদক উদ্ধার করে বিজিবি।
গত ১৮ আগস্ট ভোরে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের মেইন পিলার ২৮৫/৪ এস থেকে আনুমানিক ৮০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকার মাদক জব্দ করে বিজিবি। গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় উখিয়ার কাটাখাল সীমান্ত থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে বিজিবি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। দেশে মাদক চোরাচালানে নারী, শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগসের আবির্ভাব হচ্ছে। এতে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারজনিত সমস্যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। নতুন নতুন এসব মাদক নিয়ে আমাদের নতুনভাবে কর্মকৌশল তৈরি করতে হচ্ছে। নতুন ধরনের মাদক সম্পর্কে দেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা সজাগ রয়েছে এবং এগুলোর বিস্তার রোধে উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত এলাকায় গত এক বছরে অভিযান চালিয়ে আনুমানিক ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকার মাদক ধ্বংস করেছে বিজিবি। ধ্বংস করা মাদকের মধ্যে রয়েছে দুই কোটি ৩৩ হাজার ৯৪৯ পিস ইয়াবা, ১৪০ কেজি ৪৯ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৬১ হাজার ৪৯১ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ১৫৫ বোতল বিদেশি মদ, ২৬ কেজি হেরোইন ১৬৯ বোতল ফেনসিডিল ৫২ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা, এক হাজার ৮০০ লিটার বাংলা মদ, ১৯২ ক্যান কমান্ডো অ্যানার্জি ড্রিংক, ৫৪০ কৌটা বার্মিজ জর্দা, চার কেজি ৪০৫ গ্রাম কোকেন, দুই বোতল হুইস্কি, তিন লাখ ৩৭ হাজার ৬৪২ প্যাকেট সিগারেট ও চার কেজি আফিম। গত ১ সেপ্টেম্বর ভোরে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা নলকুড়া ইউনিয়নের বড় রাংটিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৮০ বোতল ভারতীয় মদ বোতল জব্দ করেছে পুলিশ। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৯ লাখ টাকা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন