আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড ও এর মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদকের উপপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন এবং এর অন্য সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আড়ালে র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং সিঙ্গাপুর, জাপান ও অন্যান্য দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে।
এর আগে, দুদক এই অভিযোগগুলো তদন্ত করে র্যাংগস ইলেকট্রনিক্সকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছিল। তবে, সম্প্রতি নতুন করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলস্বরূপ, গত ১৭ জুলাই কমিশন দুই সদস্যের তদন্ত দল গঠন করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এবং প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করেছে। কোম্পানিটি বিভিন্ন আইসিটি প্রকল্পে ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের নামে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে, কোম্পানির মালিকরা নিজেদের ও ছদ্মনামে দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, জালিয়াতি, ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকিসহ অন্যান্য আর্থিক অপরাধে জড়িত থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
১৯৮৪ সালে প্রয়াত আকতার হোসেন র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সাচিমি হোসেন, ছেলে জিমি একরাম হোসেন (বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক) এবং মেয়ে বিনাস হোসেন (উপব্যবস্থাপনা পরিচালক) এখন কোম্পানিটির মালিক।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির মালিকদের জাপানি নাগরিকত্ব রয়েছে। তারা এই নাগরিকত্বকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তদন্তকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা দাবি করে যে, তাদের ব্যবসায় জাপানি বিনিয়োগ রয়েছে এবং যেকোনো আইনি পদক্ষেপের কারণে এই বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হতে পারে।
তদন্তে আরও জানা গেছে যে, র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স তাদের প্রকৃত আয়ের চেয়ে কম পরিমাণ দেখিয়ে আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। তারা ৭০% কম মূল্য দেখিয়ে লেটার অব ক্রেডিট খুলেছে এবং বাকি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে। এই অর্থ পাচারে সোনালী ব্যাংকের বাংলা মোটর শাখার ম্যানেজার এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম আজাদ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন