ক্যারিয়ারে যখন সুবাতাস বইছে, ঠিক তখনই শুটিং সেটে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। এখনো তার চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যেই কাজে ফিরেছেন তিনি। অসুস্থতা ও কাজে ফেরা নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেত্রী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রকিবুল ইসলাম আফ্রিদি ।
ব্যস্ততা তেমন ব্যস্ততা নেই। আগের মতো কাজ করি না, করি না মানে করতে পারি না। একটা কাজ করার পরে একটু গ্যাপ নিয়ে পরের কাজের প্রস্তুতি নিতে হয়।
ফাইভ গো ওয়াইল্ড
সম্প্রতি আমার অভিনীত ওটিটি কনটেন্টটি মুক্তি পেয়েছে। দর্শক রেসপন্স খুব ভালো। সত্যি বলতে কি, আমি এতটা আশা করিনি। একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছিল কারণ, এখন পর্যন্ত যত চরিত্রে কাজ করেছি কখনো আইটেম সং করা হয়নি। আর এভাবে আইটেম গার্ল হিসাবে দর্শক আমাকে নিতে পারবে কিনা এটা নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু কাজটা মুক্তি পাওয়ার পর গান ও পারফরমেন্সের জন্যই অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, যা অপ্রত্যাশিত ছিল। কাজের অভিজ্ঞতা চমৎকার। তবে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সাধারণত কোনো কাজের আগে মহড়া করতে হয় না। কিন্তু এই কাজের জন্য প্রতিদিন মহড়া করা নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এখন কাজের ছন্দ কেমন?
আগের ছন্দ ফিরে পেতে একটু সময় তো লাগবেই। কাজের পরিমাণ কমিয়েছি। গড়পড়তা কাজ না করে মানের দিকে মন দিয়েছি বেশি। ব্যক্তিগত জীবন আগের চেয়ে আরও নিয়মতান্ত্রিক হয়েছে। আমার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা তাই অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। পেশাগত জীবনেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো প্রচুর কাজ করতে পারব না, তাই বছরে ৬-৭টার বেশি কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজের শারীরিক সুস্থতার জন্যই অনেক কাজ ছেড়ে দিয়েছি। অনেক নির্মাতাকেই না বলতে হচ্ছে নিরুপায় হয়ে।
এখন শুটিং সেটে নিরাপত্তা প্রটোকল কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে?
সুস্থ হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত যে কয়েকটা কাজ করেছি কোনো শুটিং সেটে এমন কিছু চোখে পড়েনি। সব আগের মতোই। সব শুটিং হাউজ কমার্শিয়াল স্পেস তারা ভাড়া দেয় কিন্তু কোনো অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখে না। মেকআপ রুমের ওয়াশরুম এখনো আগের মতোই অপরিষ্কার থাকে। ইলেকট্রিক চেক লিস্টের কথা যদি বলেন, শুটিং হাউজগুলো যেহেতু কমার্শিয়াল স্পেস তাই প্রত্যেকটা হাউজেই চেক করা উচিত। বাসাবাড়ির ইলেকট্রিক ভোল্টেজের পারমিশন নিয়ে হাউজগুলো পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা উচিত। কারণ, শুটিংয়ে অনেক হাইভোল্টেজ লাইট ব্যবহার করা হয়। যেটা আমাদের নরমাল বাসাবাড়ির লাইনের হিসাবে জন্য নিরাপদ নয়। কমার্শিয়াল স্পেসের ইলেকট্রিক লাইনের ভোল্টেজ পারমিশন আর নরমাল লাইনের পারমিশনের বিস্তর পার্থক্য আছে।
নিরাপত্তা বাধ্যতামূলক
শুটিংয়ে শুরু করার আগে ইনসিওরেন্স আর নিরাপত্তা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আমাদের সংগঠনগুলো একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটা সম্ভব নয়। শুটিং সেটে যাওয়ার আগে নির্মাতা, প্রযোজক এবং শুটিং হাউজ মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি হওয়া উচিত। তারা যেখানে কাজ করতে যাচ্ছে সেই শুটিং হাউজ শিল্পীদের জানমালের জন্য নিরাপদ।
ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন?
আমার সকল সহশিল্পী, গণমাধ্যম কর্মী, পরিবার-পরিজন সবার সমর্থন, সহযোগিতা, ভালোবাসা, দোয়া সবসময় পেয়েছি বলেই এখনো বেঁচে আছি এবং কাজে ফেরার উৎসাহটা পেয়েছি। ক্ষতিপূরণ কে দেবে? হাউজ মালিক? সে তো নিজেকে সেভ করার জন্য ব্যস্ত ছিল। আমি যখন মৃত্যুশয্যায়, ওই সময় মিথ্যা সব নিউজ করে পুরো দায় আমার ওপরই দিয়েছিল। একবারও ভাবিনি আমার ও পরিবারের ওপর দিয়ে কি যাচ্ছে। ওটা অনিরাপদ একটা শুটিং স্পট, সাফোকেটেড একটা বাথরুমে মিথেন গ্যাস কেন জমে ছিল এই প্রশ্ন না করে আগুন কেন ধরল সেটা নিয়ে সবাই পড়ে গেছিল। একটা মোমবাতি জ্বালালেও কিন্তু আগুন ধরে কিন্তু রুম ব্লাস্ট হয় না। তো দোষ কাকে দেবেন মোমবাতিকে?
ট্রমা ও স্কিন রিকভারি রুটিন কেমন ছিল?
ট্রমার জন্য দীর্ঘ তিন মাস মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়েছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। শারীরিক সুস্থতার জন্য এখনো চিকিৎসা চলছে এবং চলবে আরও দুই বছর। জীবনের এটা একটা কঠিন সফর।
আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে কি করেছেন?
সত্যি বলতে ওইভাবে কিছুই করিনি। যেদিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছি, স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি, প্রথম সুযোগেই কাজে নেমে পড়েছি। এই কাজই আমাকে ভালো থাকার, সুন্দর থাকার, আনন্দে থাকার উপলক্ষগুলো তৈরি করে দেয়।
চরিত্র, স্ক্রিন টাইম নাকি গল্প, কোনটাকে আগে রাখেন?
প্রথমে গল্প তারপর চরিত্র, গল্প আর চরিত্রের মিশেলে স্ক্রিন টাইম। সেটা একটি দৃশ্যেও হতে পারে আবার পুরা গল্পজুড়েও হতে পারে।
ইউনিটে নিরাপত্তা নিয়ে কি চেক করেন?
এখন আমি শুটিংয়ে গেলে আমাকেই সবাই চোখে চোখে রাখে, আমি আর কি চেক করব।
কি কাজ আসছে?
আইস্ক্রিনের জন্য একটি কাজ করেছি। নাম ‘বিয়ে করি কল্পনা’। নাটকটি পরিচালনায় করেছেন রাহাত কবির। এ মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
নতুন কোনো সিনেমায় কাজ করছেন?
প্রস্তাব পেলে করব। গল্প, চরিত্র এবং অর্থনৈতিক বিষয় যদি সব ঠিকঠাক থাকে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন