সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

আলোকবর্তিকার চিরবিদায়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

বদরুদ্দীন উমর

বদরুদ্দীন উমর

লেখক-গবেষক ও বামপন্থি রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বদরুদ্দীন উমর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সকালে তাকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান বলে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম গণমাধ্যমে জানান। তার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শোক জানিয়েছেন নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজ সোমবার জুরাইন কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হবে। 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রোববার এক শোকবার্তায় বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়া বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। শোকবার্তায় বদরউদ্দীন উমরের শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধান উপদেষ্টা।

প্রখ্যাত এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের পাঠানো তাৎক্ষণিক দেওয়া শোকবাণীতে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বদরুদ্দীন উমর ব্রিটিশ ভারতের খ্যাতনামা রাজনীতিক আল্লামা আবুল হাশিমের সন্তান ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। জীবদ্দশায় তাকে ইতিহাসে রাজনৈতিক জীবন্ত কিংবদন্তি বলা হতো। 

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। তারা বলেন, বদরুদ্দীন উমর বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এক অনন্য সাধারণ চরিত্র। তিনি বার বার ইতিহাসের গতিধারা বিশ্লেষণ করে জনগণের সংগ্রামের পথনির্দেশ করেছেন। জীবনের পুরোটা সময়জুড়ে অবিচল থেকেছেন প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, গণমুখী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। 

জুরাইন কবরস্থানে হবে দাফন:

মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম জানিয়েছেন, প্রখ্যাত লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমরকে আজ সোমবার রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হবে। তিনি জানান, উমরের বড় মেয়ে বিদেশে রয়েছেন। তার ফেরার পরই ইচ্ছানুযায়ী জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। দাফনের আগে সোমবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে সোমবার সকাল ১০টার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে তার মরদেহ নেওয়া হবে। সেখানে সবার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হবে মরদেহ।

বদরুদ্দীন উমরের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি শিক্ষকতা, রাজনীতি ও লেখালেখির মাধ্যমে সমাজে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি উচ্চশিক্ষায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তার হাত ধরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কারে ভূষিত হন বদরুদ্দীন উমর। তবে তিনি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি।

জানা যায়, বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্ধমান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পিপিই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক নীতি ও আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতি, গবেষণা ও লেখালেখিতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন।

পরে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল এবং নিজেই সভাপতির দায়িত্ব নেন। বদরুদ্দীন উমরের গবেষণাগ্রন্থ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতির ওপর এক অগ্রগণ্য ও সমন্বিত গবেষণা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি একজন চিন্তাশীল, আদর্শনিষ্ঠ এবং আপসহীন রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। 

তার পিতা আবুল হাশিম ছিলেন বিশিষ্ট মুসলিম লীগ নেতা ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক। পঞ্চাশের দশকে তার বাবা ঢাকায় ‘খেলাফত-ই-রব্বানী পার্টি’ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ইসলামি আদর্শ বাস্তবে রূপায়িত করাই ছিল এ দলের আদর্শ। পারিবারিক রাজনৈতিক কারণেই শুরুতে ইসলামি চিন্তাধারায় প্রভাবিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই বদরুদ্দীনের চিন্তায় বাঁকবদল ঘটে। পরবর্তীকালে তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতির মৌলিক চিন্তাধারা বহন ও প্রচার করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম মার্ক্সবাদী দার্শনিক। ২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে বদরুদ্দীন উমর বলেন, প্রথম জীবনে পিতার প্রভাবে এক ধরনের ইসলামি চিন্তার আচ্ছন্নতা ছিল। যে কারণে ঢাকায় আসার পরও তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলাম।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে তা কাটতে শুরু করে। তারপর অক্সফোর্ডে যাওয়ার পর মার্ক্সবাদী চিন্তা-ভাবনা পূর্ণতা পায়। সেখানে থাকার সময় তিনি তৎকালীন বিশ্বের সব ধরনের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করেছি। ১৯৫০ সালে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৩ সালে দর্শনে স্নাতক ও ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোসফি, পলিটিকস ও ইকোনমিকস বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে তার পেশাজীবনের শুরু। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৫৭ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই তিনি সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে পূর্ণকালীন রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৩ সালে গঠন করেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, যার সভাপতির দায়িত্ব তিনিই পালন করেন। বদরুদ্দীন উমর বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান মার্ক্সবাদী চিন্তাবিদ, লেখক ও সম্পাদক। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!