- গত ১৩ মাসে গণপিটুনিতে নিহত ২২০
- চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত মব সহিংসতার ২৩০ ঘটনায় নিহত ৭৯ ও আহত ২৬৫ জন
- হত্যাকা- বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে, কম সিলেটে
- ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ১২৮, ২০২৩ সালে ৫১, ২০২২ সালে ৩৬, ২০২১ সালে ২৮ এবং ২০২০ সালে ৩৫ জন
- ছয় মাসে ২৩০ সহিংসতায় আহত অন্তত ২৬৫
- মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ
- মবের সুযোগ নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে অন্যায় স্বার্থ হাসিল করছে বিভিন্ন গোষ্ঠী
মাইকে ঘোষণা দিয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুনায়েদ হোসেনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার সকালে কলেজ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার আগের দিন শনিবার মধ্যরাতে টাঙ্গাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় একদল মুখোশধারী। গত শুক্রবার রাজবাড়ীতে ঘটেছে দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক ঘটনা। কথিত মাজার ও বাড়িতে হামলার পাশাপাশি সেখানে লাশ তুলে পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। লাশ পোড়ানোর ভিডিও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা দেখে অনেকেই শিউরে উঠছেন। এই ঘটনাকে ‘অমানবিক ও ঘৃণ্য’ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হবে।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনের পবিত্রতা জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সম্প্রতি দেশে মব সহিংসতা বা সংঘবদ্ধ অপরাধ বা গণপিটুনি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। কোনো মতেই বাগে আনা যাচ্ছে না মব সহিংসতা। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও এ সহিংসতায় প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। এতে নিহত হচ্ছেন দুষ্কৃতকারী ছাড়াও সাধারণ মানুষ। মব সহিংসতার শিকার হচ্ছেনÑ পুলিশ, শিক্ষক থেকে শুরু করে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী ছাড়াও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ যাচ্ছেন না বিদেশিরাও। বাসা-বাড়িতে লোকজন ঢুকে সবকিছু তছনছ করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সন্ত্রাসী নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন ‘তৌহিদি জনতা’। ফলে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এরা কি তৌহিদি জনতা, নাকি উচ্ছৃঙ্খল জনগোষ্ঠী, নাকি প্রেসার গ্রুপ। সাম্প্রতি ভয়েস ফর রিফর্ম ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মব সহিংসতার ঘটনা নিয়ে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ উদ্বিগ্ন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও ঢিলেঢালা মনোভাবের সুযোগে একদল জনতা মব তৈরি করছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া মবের সুযোগ নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে অন্যায় স্বার্থ হাসিল করছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও চাকরিচ্যুতিতেও মবের সুযোগ নিচ্ছে অসাধু চক্র। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আইন অবজ্ঞা করে মব সহিংসতার মাধ্যমে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি এবং ভয়াবহ পরিবেশ তৈরিতে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের ঘটনা প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদ-ের দৃষ্টিতে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য।
গত এক বছরে মব সহিংসতার নামে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় কয়েক গুণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গত এক বছর এক মাসে দেশে অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
এ ছাড়া মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ছয় মাসে দেশে মব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২৩০টি। এতে নিহত হয়েছেন ৭৯ জন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ২৬৫ জন। এর মধ্যে মার্চ মাসে ৩৯টি মব সহিংসতায় ১৩ জন নিহত ও ৫৬ জন আহত হয়েছেন।
গণপিটুনির শিকার ৪০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ২৭টি ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হন। গণপিটুনির শিকার ২৫ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। মে মাসে ৩৪টি গণপিটুনির ঘটনায় সাতজন নিহত ও ৩৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ৩০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। জুনে ৪১টি ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া জুলাই মাসে ৫১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়েছেন। ৩০ জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সর্বশেষ আগস্ট মাসে ৩৮টি মব সহিংসতায় ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতর আহত হন। এসব ঘটনায় ২২ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
আসকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ২৯। ২০২৪ সালের দেশের পট পরিবর্তনের মাস আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১১২ জন। সে হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ছয় মাসে গড়ে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১৯ জন।
আসকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ মাসে মব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২২০ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯৬ জন, খুলনায় ১৯ জন, রাজশাহীতে ২১ জন, রংপুরে ১১ জন, সিলেটে ৬ জন, চট্টগ্রামে ৪০ জন, বরিশালে ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে নিহত হয়েছেন ৯ জন।
পরিসংখ্যান বলছে, পট পরিবর্তনের মাস আগস্টে গণপিটুনিতে মারা যান ২১ জন। পরের মাস সেপ্টেম্বরে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় ২৮ জনের, যা ২০২১ সালের পুরো বছরের সমান। গত বছরের অক্টোবরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন ১৯ জন, নভেম্বরে ১৪ জন এবং ডিসেম্বরে ১৪ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ১১ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ১৩ জন, জুন মাসে নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং জুলাই মাসে নিহত ১৪ জন। এ ছাড়া গত আগস্ট মাসে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনিতে, যা জুলাই মাস থেকে সাতজন বেশি।
আসকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন, ২০২২ সালে ৩৬ জন, ২০২১ সালে ২৮ জন এবং ২০২০ সালে ৩৫ জন।
ভয়েস ফর রিফর্ম ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত এক সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, জনগণের সংস্কার প্রত্যাশা এবং আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর জনসমর্থন বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়Ñ নারীর নিরাপত্তা, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা এবং পোশাক নিয়ে হয়রানি নিয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানুষের উদ্বেগ রয়েছে। ফলাফলে বলা হয়, সার্বিকভাবে মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগে ৮০ শতাংশ, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ৬১ শতাংশ এবং পোশাক নিয়ে রাস্তায় হয়রানি বিষয়ে উদ্বেগে রয়েছেন ৬৭ শতাংশ।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও কয়েকটি মব সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। সর্বশেষ গতকাল রোববার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এস ও ঈদগাহ মাঠের কাছে বটতলায় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে এক ছিনতাইকারী নিহত হয়েছেন। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এ ছাড়া এর আগের দিন ৬ সেপ্টেম্বর শনিবার মধ্যরাতে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল মুখোশধারী হেলমেট পরা অবস্থায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলের বাড়িতে হামলা চালায়। মই বেয়ে বেশ কয়েকজন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমে গাড়ি ভাঙচুর করে। বিষয়টি বাড়ির লোকজন টের পেয়ে চিৎকার করলে তারা দেয়াল টপকে চলে যায়। পরে বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বাসার জানালার কাচ ভেঙে যায় এবং দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একই দিন সকালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় চোর অভিযোগে গণপিটুনিতে রিপন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত রিপন ওই গ্রামের মোজাম্মেল মিস্ত্রির ছেলে।
এ ছাড়া গত ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরা পাগলার দরবার শরিফে দফায় দফায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরিপন্থি হিসেবে দাফনের অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেন একদল জনতা। গত ৩১ আগস্ট রোববার ভোররাতে নাটোর সদর উপজেলার নেপালদীঘি গ্রামে চোর সন্দেহে নবীর আলী নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গত ২৪ আগস্ট পটুয়াখালীর বাউফলে ডাকাতির পর পালাতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে উজ্জল মোল্লা নামে একজন নিহত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলাকে শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, বরং এটি সমাজে বিদ্যমান নৈতিক অবক্ষয়, আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা এবং সহিংস জনমতের উত্থানের উদ্বেগজনক চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত। কবরস্থ একটি মৃতদেহকে অপমান করা, কবর থেকে লাশ উত্তোলন ও আগুনে পোড়ানো শুধু ব্যক্তির নয়, গোটা মানব জাতির মর্যাদার বিরুদ্ধে আঘাত। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যদি কঠোর অবস্থান না নেয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলার প্রতি জনগণের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেন এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওতে বলেন, রাজবাড়ীতে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলার জন্য জনতাকে যারা উসকে দিয়েছে, তারাই আসল কালপ্রিট। নুরাল পাগলা যা করছিলেন সেটা ভ-ামি; আর তাকে নিয়ে যা করা হচ্ছে এগুলো ইসলামের নামে আরেক ধরনের ভ-ামি।
মাসুদ কামাল বলেন, কবর থেকে লাশ তুলে তা জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছেÑ এ ধরনের ঘটনা আপনাদের জীবদ্দশায় শুনেছেন কি না, আমি জানি না। কিন্তু রাজবাড়ীতে এটা ঘটেছে এবং ঘটতে দেওয়া হয়েছে। ঘটতে দেওয়া হলো বললাম এ কারণে যে, এটা ঘটবে তা কিন্তু এর কদিন আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। যারা এটা ঘটিয়েছে, তারা একটি প্রেস কনফারেন্স করেছিল।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনার দুই দিন আগে যেই ইমান-আকিদা কমিটি বিবৃতি দিয়েছিল, হামলার পর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার ভিডিওতে তাদের দেখা যাচ্ছে না, এতে দেখা যাচ্ছে অন্যদের। এখন মামলা হবে, অনেকে ধরা পড়বে। কিন্তু যারা এই জনতাকে উসকে দিয়েছিল, তারাই আসল কালপ্রিট।
এদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে দাবি করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত দিন যেমন ছিল, সাম্প্রতিক কয়েক দিনের ঘটনায় আমি বলব, সেটা কিছুটা খারাপের দিকে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে দ্রুতই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
শুক্রবার রাজবাড়ীতে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজবাড়ীর ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখছি। কয়েকজনকে ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তা তখনই জানা যাবে।
তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না, সেটা তদন্তেই বের হবে। আগে থেকেই কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিলে তদন্তের গুরুত্ব নষ্ট হবে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আর কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগাম হুমকি থাকা সত্ত্বেও কেন রাজবাড়ীর অস্থিরতা ঠেকানো যায়নিÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ব্যর্থ হইনি। যারা এসব ঘটিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আসলে আমরা অনেকটাই অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। সমাজে ধৈর্যের অভাব তৈরি হয়েছে। তাই সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।
এ ছাড়া গতকাল এক মতবিনিময় সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সরকার মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মব সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন