সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম

পবিস-আরইবি বিরোধ

আরইবি কর্মীদের গণছুটি সরকারের হুঁশিয়ারি

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম

বিদ্যুৎ বিপর্যয়

বিদ্যুৎ বিপর্যয়

* আরইবি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র সংস্থার দাবি
* বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দেশ
* পল্লী অঞ্চলের গ্রাহকদের দুর্ভোগ চরমে
* গ্রাহককে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় মানা হবে না : ফাওজুল কবির

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনে পরিচালিত হলেও এতদিন নিজেদের আয়েই চলছিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো (পবিস)। কিন্তু এভাবে আর চলতে চাচ্ছেন না এর কর্মীরা। সরাসরি আরইবির কর্মী হিসেবে নিয়োগ চান তারা। কিন্তু বিদ্যুৎ নীতিমালা অনুযায়ী আরইবি সেই প্রস্তাব মানতে সম্মত নয়। ফলে একই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরোধ। পল্লী বিদ্যুতের সংস্কার, চাকরি বৈষম্য দূরীকরণ ও হয়রানিমূলক পদক্ষেপ বন্ধের চার দফা দাবিতে গতকাল রোববার থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে করে পুরো দেশের পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের শংকা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এমন পরিস্থিতিতে যখন তখন বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি দিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় করা যাবে না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনরতদের ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, আন্দোলনের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহকসেবা ব্যাহত হলে সরকার কঠিন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পূরণে প্রচেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে সরকার সংবেদনশীল। পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কাজে নিয়োজিত এবং গণছুটির নামে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হলো। 

গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-দপ্তর সম্পাদক অঞ্জু রানী মালাকার বলেন, একাধিকবার কমিটি গঠনসহ সংকট সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখি আশ্বাস দেওয়া হলেও কিছুই বাস্তবায়ন করেনি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি, বদলি, বরখাস্তসহ নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে হয়রানি করছে। এর ফলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের ৬৪ জেলায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। এসব সমিতিতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহক তাদের আওতায়। গত বছর থেকেই তারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেয়ারম্যানকে অপসারণসহ বেশকিছু দাবিতে সমিতির কর্মীরা আন্দোলন করে আসছিলেন। সেই আন্দোলনকারীদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার প্রতিবাদে সাধারণ কর্মীরা তখন ৬১টি সমিতিতে ব্ল্যাকআউট করে। শুধু তাই নয়, দাবি আদায় না হলে ঢাকামুখী লংমার্চেরও হুমকি দেন তারা। 

আন্দোলনকারীরা বলছেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে সব লাইন নির্মাণ এবং মালামাল ক্রয় ও সরবরাহ করা হয়। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবচেয়ে বড় কাজ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন সংযোগ দেওয়া এবং অভিযোগ সমাধান করে থাকে। কিন্তু পবিস কর্মীদের দাবি, অন্যান্য বিতরণ সংস্থার থেকে অতি নি¤œমানের মালামাল দিয়ে লাইন নির্মাণ এবং নি¤œমানের মিটার, ট্রান্সফরমার, তারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। ফলে আকাশে মেঘ উঠলেই পল্লী বিদ্যুতের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ভুক্তভোগী হয় সাধারণ গ্রাহক এবং গ্রাহক পর্যায়ে থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায়, এই সিস্টেমের সংস্কার দাবি করায়, শহর এবং গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনের দাবি তোলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে। 

তারা আরও অভিযোগ করেন, চলতি গত বছরের জানুয়ারি মাসে বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর শুধু স্মারকলিপি পাঠানোর জন্য দুজন এজিএমকে সাসপেন্ড এবং কয়েকজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। অথচ যশোর-১ এর জিএম ইসাহাক আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারী কর্মীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ প্রদান করা হয়। 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ জরুরি সেবার অন্তর্ভুক্ত। তাই এই খাতটিকে সব ধরনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। কারো কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ভোক্তাদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলনই গ্রহণযোগ্য নয়। 

তবে আন্দোলন করে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আন্দোলন করে কেউ দাবি আদায় করতে পারবে না। বিদ্যুৎ একটি জরুরি সেবা। এই সেবা বন্ধ রেখে কোনোভাবেই আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুনরায় সংযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ নির্দেশনা না মানলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পল্লী অঞ্চলে দুর্ভোগ :

সরকারি হিসাব বলছে, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছাড়িয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের উপরে, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের রেষারেষিতে লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পল্লী অঞ্চলের বাসিন্দাদের। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দিনের শুরুতে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট। আর দেশের শেষ ভাগে বা পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে। চাহিদা না থাকায় সরকার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারছে না। এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও বাড়ছে। কিন্তু তবুও লোডশেডিংয়ে নাজেহাল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের বাণিজ্যিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি সমস্যায় পড়ছেন আবাসিক গ্রাহকরা। 

অভিযোগ পাওয়া যায়, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, যশোর, লালমনিরহাট, নাটোরের গ্রামীণ জনপদ থেকেও। নেত্রকোনার মদন উপজেলার বাসিন্দা মম ইসলাম অভিযোগ করেন, চাকরির জন্য পড়ালেখা করছেন বাড়িতে বসে। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে থাকছে না বিদ্যুতের আলো। ফলে পড়ালেখার মনোভাবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। 

আরইবি ছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যত বিদ্যুৎ পেত না, আর পবিস ছাড়া আরইবি সরাসরি মাঠপর্যায়ে কাজ করতে পারত না। ফলে একে অপরকে শত্রু না ভেবে দুটিকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আরইবি আইন ১৯৭৭-এর ১৮(২) ধারা অনুযায়ী বোর্ডের অনুমতি ছাড়া কোনো পবিস বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম চালাতে পারবে না। পবিসগুলো আরইবি কর্তৃক প্রদত্ত নিয়ম, বিধি ও নীতিমালার অধীনে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ আইনে স্পষ্ট যে, পবিস ‘স্বাধীন’ সমবায় হলেও এটি আরইবি’র অধীন নিয়ন্ত্রিত একটি কার্যকরী একক। যা আলাদা হলে চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়ে যাবে।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশ বিদ্যুৎ বিভাগের:

পবিসের এই আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ একটি অত্যাবশ্যক পরিষেবা হওয়ায় এই সেবা প্রদানে বাধাদান বা বিঘœ ঘটানো অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কাজে নিয়োজিত এবং গণছুটির নামে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!