সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আবু আহমেদ ফয়জুল কবির

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

গণপিটুনি প্রতিরোধ নৈতিক দায়িত্ব

আবু আহমেদ ফয়জুল কবির

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

আবু আহমেদ ফয়জুল কবির

আবু আহমেদ ফয়জুল কবির

বাংলাদেশে গণপিটুনি যেন এক দুঃসহ বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে এই প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধু  ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে কমপক্ষে ১২৪ জন নাগরিক গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এই সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ  চিত্র। এসব মৃত্যু আমাদের সবার বিবেককে তাড়না দিচ্ছে।  

বাংলাদেশের সংবিধান স্পষ্টভাবে নাগরিকের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করেছে। ৩২ অনুচ্ছেদ প্রতিটি নাগরিককে আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া জীবন বা ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না করার অধিকার প্রদান করে। ৩১ অনুচ্ছেদ নাগরিককে আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে এবং ২৭ অনুচ্ছেদ সমতার অধিকার ও আইনের সমান প্রয়োগের নিশ্চয়তা দেয়। 

একইভাবে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ধারা ১৪৯ অনুযায়ী, ‘যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা নিজ ক্ষমতায়, যত দূর সম্ভব, কোনো জ্ঞাত অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধ করবেন’ এবং ধারা ১৫০-১৫২ অনুযায়ী অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা থাকলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এ ছাড়া ধারা ১৫৪-১৫৭ পুলিশকে অবিলম্বে অপরাধের তথ্য গ্রহণ, নথিভুক্তকরণ, তদন্ত এবং অপরাধী গ্রেপ্তারের বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ আইন, ২০১৮-এর ৪৪ ও ৪৫ ধারা পুলিশ সদস্যদের নাগরিকের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধের দায়িত্ব দেয়। এই ধারাগুলোর প্রতি পুলিশের অবহেলা ও উদাসীনতা সরাসরি আইনের লঙ্ঘন। পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই নাগরিকের জীবন রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে হবে, এটা তাদের পেশাগত বাধ্যবাধকতা। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নাগরিকের জীবন রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ আশা করি। 

মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে গণপিটুনির ঘটনাগুলো ভয়াবহ। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রÑ ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস (ইউডিএইচআর) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিÑ ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) স্বাক্ষরকারী দেশ। ইউডিএইচআরের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রতিটি মানুষের জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করে। ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। আইসিসিপিআরের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রকে নাগরিকের জীবন রক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে এবং ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ নিষ্ঠুর বা অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করে। পুলিশের উদাসীনতা ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা এই আন্তর্জাতিক নীতিমালাগুলোর স্পষ্ট লঙ্ঘন। 

কিন্তু এভাবে মব-সন্ত্রাস চলতে থাকলে নিরপরাধ মানুষ হত্যার শিকার হতে থাকবে, অপরাধীরা মবের আড়ালে সুরক্ষা পাবে, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মানবাধিকার চিত্র আরও দুর্বল হবে আর গণতন্ত্রের ভিত্তি ভেঙে পড়বে। তাই এখনই স্পষ্ট নীতি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

গণপিটুনি শুধু নিরপরাধ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে না, এটি আমাদের সমাজের নৈতিক ভিত্তিতেও আঘাত হানে। এটি আমাদের সংবিধান, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়াÑ গণপিটুনি অপরাধ  দ্রুত তদন্ত, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু রাষ্ট্র একা এই লড়াই করতে পারবে না। নাগরিক সমাজকেও একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, স্কুল, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবাইকে সচেতন করতে হবে, মানুষকে বোঝাতে হবেÑ আইনের বাইরে বিচার নেওয়া কখনো সমাধান নয়, বরং সমাজের নিরাপত্তা ও শান্তিকে বিপন্ন করে। 

আজ যদি আমরা এই ভয়ংকর ব্যাধির বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াই, তবে আমরা শুধু নিরপরাধ মানুষকে রক্ষা করব না, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ, ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক সমাজ দিতে পারব। গণপিটুনি থামানো এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এটি রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজ দুই দিক থেকেই সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়।  

লেখক: মানবাধিকার কর্মী


 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!