বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্টসহ ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন নথি প্রদর্শন করেন এবং পাসপোর্টে কর্তব্যরত কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন। আনুষ্ঠানিক এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কখনো কখনো ঘণ্টাও লেগে যায়।
এবারে দুবাইতে এমন এক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে যেখানে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ইমিগ্রেশনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। সম্প্রতি এআই প্রযুক্তির সহায়তায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হয়েছে একটি প্যাসেঞ্জার করিডর, যেখানে সর্বনি¤œ ১৪ সেকেন্ডেই ইমিগ্রেশনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা সম্ভব।
এআই-চালিত এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মুখম-ল শনাক্তকরণের (ফেসিয়াল রিকগনিশন) প্রযুক্তি এবং প্রাক-নিবন্ধিত বায়োমেট্রিক ডেটা। এই প্রক্রিয়ায় যাত্রীদের তাদের পাসপোর্ট বা ভ্রমণ সম্পর্কিত কোনো নথি কাউকে দেখাতে হয় না। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য এবং ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন পার হওয়া যায়। দুবাই সরকারের উচ্চাভিলাষী প্রোজেক্ট ‘ট্রাভেল উইথাউট বর্ডারস’-এর অংশ হিসেবে ভ্রমণ প্রযুক্তির এই স্মার্ট ব্যবহার চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের পুরো প্রক্রিয়াটি কার্যকরভাবে ও নির্বিঘেœ পরিচালনা করা সম্ভব। উল্লেখ্য, নতুন এই ব্যবস্থায় একসঙ্গে ১০ জন পর্যন্ত যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।
এখানেই শেষ নয়। এআই-পরিচালিত এই স্মার্ট প্রক্রিয়ায় ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে না কোনো পাসপোর্ট কাউন্টার ও স্মার্ট গেটের। এ ছাড়া যাত্রীদের ফিজিক্যাল (শারীরিক) পরীক্ষারও দরকার পড়বে না।
দুবাইয়ের বিমানবন্দরে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের এটাই প্রথম উদাহরণ নয়। ২০২০ সালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ‘স্মার্ট টানেল’ চালু করেছিল, যেখানে যাত্রীরা কাউন্টারে লাইন ধরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে একটি বায়োমেট্রিক স্ক্যানিং জোনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেত।
এবারে নতুন চালু হওয়া প্যাসেঞ্জার করিডর এআইর ব্যবহারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এআই প্রযুক্তি-চালিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় যাত্রীরা চেকপয়েন্টে পৌঁছানোর আগেই এআই তাদের তথ্য যাচাই করতে শুরু করবে। সিস্টেম ক্রমাগতভাবে যাত্রীদের বায়োমেট্রিক তথ্য রেকর্ডে থাকা তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে যাত্রীদের পরিচয় নিশ্চিত করবে। এই যাচাইকরণ প্রক্রিয়াটি রিয়েল-টাইমে সম্পন্ন হবে।
তথ্যগত অসঙ্গতি কিংবা সন্দেহজনক গতিবিধি শনাক্ত হলেই এআই-চালিত সিস্টেম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানাবে এবং বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি রিভিউ করবেন। তবে প্রয়োজন হলেও কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে আসবেন।
প্রাথমিকভাবে উন্নত এই সিস্টেমটি দুবাই বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-এর ফার্স্ট ক্লাস ও বিজনেস ক্লাস লাউঞ্জে চালু করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল যাত্রীদের জন্যই এই সুবিধা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, যেখানে কোনো প্রকার ডকুমেন্ট না দেখিয়েই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যাবে। দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিস্তৃত এই প্রোগ্রামকে ‘আনলিমিটেড স্মার্ট ট্রাভেল’ নামে অভিহিত করেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন