পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে টেন্ডার ছাড়াই সহকারী শিক্ষকের যোগসাজশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা ভেঙে শতাধিক পুরোনো বেঞ্চ কেজি দরে বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিলেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা। বিষয়টি গতকাল রোববার সকালে নিশ্চিত করেছেন ২৪ নম্বর ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট ওই স্কুলের একটি পরিত্যক্ত ভবন, ৮টি মেহগনি ও ৬টি চম্বলগাছের নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং ১১ আগস্ট নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। পরিত্যক্ত ভবনের কক্ষে পুরোনো শতাধিক লোহার বেঞ্চ রাখা ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল সিকদার, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহিন বয়াতি ও ইমাম শিকদার চ-ীপুরের ভাঙারি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন গাজীর কাছে বেঞ্চগুলো বিক্রি করেন। গতকাল দেখা যায়, জাকির গাজীর গুদামে বেঞ্চগুলো স্তূপ করে রাখে হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন গাজী বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা সোহেল শিকদার, ইমাম শিকদার ও শাহীন বয়াতির কাছ থেকে ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো লোহার ৪৯০ কেজি বেঞ্চ ৩৯.৫০ টাকা দরে মোট ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকায় কিনেছি। একটি চুক্তিপত্রে ওই তিনজন নেতার নাম, স্বাক্ষর ও মোবাইল নম্বর দেখে আমি বেঞ্চগুলো ক্রয় করি।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল সিকদার জানান, আমি বিদ্যালয়ের বেঞ্চ নেইনি। সামনে আমাদের কমিটি হবে। তাই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমি কোনো বেঞ্চ বিক্রি করিনি। স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনে পুরোনো ও অপ্রয়োজনীয় বেঞ্চগুলো রাখা ছিল। যেগুলো আমাদের প্রয়োজন সেগুলো রেখে বাকি বেঞ্চগুলো তালাবদ্ধ করে রাখি। কিন্তু স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা সোহেল শিকদার, ইমাম শিকদার ও শাহীন বয়াতী দরজা ভেঙে জোর করে বেঞ্চগুলো নিয়ে যায়। বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ফরিদ আহম্মেদকে জানালে সে আমাকে বেঞ্চগুলো ওই ৩ নেতাদের দিয়ে দিতে বলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমাকে বলেছে, এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবেন।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ফরিদ আহম্মেদ জানান, ‘ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাওলানা জসিম উদ্দিন বিএনপি অফিসে বসে আমাকে বলেন, ‘ওই বেঞ্চগুলো আমাদের কাজে লাগবে না, ওগুলো নিলে কোনো সমস্যা নাই। তবে যারা নিউজ করেছে আমি সব জানি। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
সহকারী শিক্ষক মাওলানা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি বেঞ্চ বিক্রি করিনি। তবে উপজেলা অফিসে বসে বিএনপির সভাপতিকে পুরাতন বেঞ্চগুলো নিতে বলেছিলাম। আসলে আমি না বুজে এ কথা তাকে বলেছি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের শুধু একটি পরিত্যক্ত ভবন ও কয়েকটি গাছের নিলাম হয়েছে। কোনো বেঞ্চ বিক্রির নিলাম হয়নি। পুরোনো বেঞ্চ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই বা কেউ অনুমতি নেয়নি। বিয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান-বিন-মুহাম্মদ আলী জানান, পুরোনো বেঞ্চ বিক্রির নিলাম হয়নি। বেঞ্চ বিক্রির বিষয়ে তদন্ত করে ঘটনা সত্য প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন