দেশের কয়েকটি অঞ্চলে মিষ্টি পান চাষাবাদ করা হয়। তার মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়ও অন্যতম। এখানকার মিষ্টি পান শুধু ভোলাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এর খ্যাতি রয়েছে। বিগত সময়ে দেশের বাইরেও এই পান রপ্তানি করা হয়েছে। বিশেষ করে বিয়ে ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের অতিথি আপ্যায়নে এই পান বিবেচিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া অনেকেই বেড়াতে গেলে কয়েক বিরা পান সঙ্গে নিয়ে যান প্রিয়জনদের বাড়িতে।
উপজেলায় পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে পান চাষে ভালো ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় পান বিক্রি করে তারা যে দাম পাচ্ছেন, তা চরমভাবে হতাশাজনক। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা সাধারণত আবাদি, অনাবাদি ও বাড়ির পাশে পান চাষাবাদ করেন। পান চাষ করেই অনেক অসহায় ও হতদরিদ্র চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গত শনিবার সকালে চরফ্যাশন সদরে পানের পাইকারি হাটে দেখা যায়, চাষিরা পানের পাই সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাইকারদের অপেক্ষায়। তারা বিভিন্ন বাহনে করে হাটে পান নিয়ে এসেছেন। সপ্তাহে শনিবার ও বৃহস্পতিবার চরফ্যাশন সদরে পানের হাট বসে। এখান থেকেই পাইকাররা পান কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পান সরবরাহ করেন।
চাষিরা জানান, ৭২টি পানে এক বিরা। ১২ বিরা পানে এক পাই। তাদের কাছ থেকে পাইকাররা পাই হিসেবেই পান কিনছেন। বর্তমানে এক পাই পান ৫৫০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত বছরেও এক পাই পান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তারা আরও জনান, একসময় তাদের উৎপাদিত মিষ্টি পান দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর এই পান আর বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে না। বর্তমানে পানের দাম কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই ৬ মাস পান উৎপাদন বেশি হয়। চলতি মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে পান চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন চাষি পান চাষ করছেন। এর মধ্যে নীলকমল, নুরাবাদ, আহাম্মদপুর, এওয়াজপুর এবং ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন পান চাষ বেশি হয়।
পানচাষিদের দাবি, তারা বিগত বছরগুলোয় বর্ষার মৌসুমে পান বিক্রি করে লোকসানে পড়েনি। অন্তত তাদের খরচ পুষিয়ে কিছুটা লাভবান হয়েছেন। তবে এ বছর একেবারেই লোকসানে রয়েছে তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে পানচাষিরা বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর দাম কিছুটা কম পাচ্ছে। তবে আমরা কৃষি অফিস থেকে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি অঅরও বলেন, চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, যদি পান বিদেশে রপ্তানি বাড়ানো যায় তাহলে তারা আশানুরূপ দাম পাবে। এ ছাড়া সরকার মাঠ ফসলের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে থাকে। তবে পানচাষিদের জন্য প্রণোদনার সুযোগ নেই।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন