মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৭:১১ এএম

ধ্বংসস্তূপজুড়ে নারীদের গোঙানির শব্দ

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৭:১১ এএম

ধ্বংসস্তূপজুড়ে নারীদের গোঙানির শব্দ

ধ্বংসস্তূপজুড়ে নারীদের গোঙানির শব্দ

নারীদের স্পর্শ করা যাবে না। তালেবান সরকারের এই ফতোয়ার কারণে ভূমিকম্পের পরে তাই এক দুর্বিসহ চিত্র তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে কাতরালেও কোনো নারীকে উদ্ধার করা হচ্ছে না! বাঁচানো হচ্ছে কেবল পুরুষদেরই। কারণ উদ্ধারকারীরাও যে পুরুষ! প্রাকৃতিক দুর্যোগে চারদিক তছনছ হয়ে গেলেও সরকারের ফতোয়া তো ভোলা যায় না! মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইম্স ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে এমন মর্মস্পর্শী তথ্য তুলে ধরেছে। তালেবানের নিয়ম অনুযায়ী, একই পরিবারের সদস্য না-হলে কোনো নারীকে স্পর্শ করা যাবে না। তারা একে অপরকে স্পর্শ করতেই পারেন না।

নারী এবং পুরুষের শারীরিক সংস্পর্শ একমাত্র স্বীকৃতি পারিবারিক যোগের ক্ষেত্রেই। তালেবান সরকার জানিয়ে দিয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা যাবে না। ফলে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে চাইলেও নারীদের উদ্ধার করতে পারছে না পুরুষদের উদ্ধারকারী দল। নারীদের ফেলে রেখে কেবল আহত পুরুষদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২,২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহত সাড়ে তিন হাজারের বেশি। প্রথম কম্পনের উৎসস্থল ছিল পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া পূর্ব আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশ।

রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৬.৩। এর পর একাধিকবার ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন (আফটারশক)-এ কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান। তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে ঘরবাড়ি। বহু মানুষ তাতে চাপা পড়ে যান। গ্রামের পর গ্রাম ধূলিসাৎ হয়ে যায় ভূমিকম্পে। তৎপরতার সঙ্গেই ভূমিকম্প কবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ শুরু করেছিল তালেবান সরকার। কিন্তু সেখানে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে পুরুষদেরই। কুনার প্রদেশের আন্দারলুকাক গ্রামের বাসিন্দা ১৯ বছরের আয়েশা বলেন, উদ্ধারকারী দলে কোনো নারী ছিল না। ওরা এলো।

আমাদের এক দিকে সরিয়ে দিল। তার পর আমাদের কথা ভুলে গেল! আমাদের মধ্যে অনেকেই রক্তাক্ত, আহত। কিন্তু কোনো নারীকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আমাদের কী চাই, কেউ জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেনি। উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য তাহ্জিবুল্লা মুহাজেব সংবাদমাধ্যমে জানান, তাদের মেডিকেল টিমের সব সদস্যই ছিলেন পুরুষ। সরকারি ফতোয়ার কারণে ভেঙে পড়া বাড়ির নিচ থেকে আটকে পড়া নারীদের টেনে বার করার সাহস তারা পাননি।

ফলে আহত নারী বা কিশোরীরা পাথরের নিচে আটকে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অন্য গ্রাম থেকে মেয়েরা কখন উদ্ধার করতে আসবেন, তার জন্য বসে থাকতে হয় তাদের। মুহাজেবের কথায়, আমাদের মনে হচ্ছিল, নারীরা যেন অস্পৃশ্য। পুরুষ এবং শিশুদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল।

কিন্তু আহত নারীরা অপেক্ষা করছিলেন আর কাতরাচ্ছিলেন। এ তো গেল আহত নারীদের কথা। কিন্তু যারা মারা  গেছেন? মৃতদেহ ছুঁতেও সাহস পাননি আফগান উদ্ধারকারীরা। প্রথমে ওই মৃতদের নিকট আত্মীয়ের খোঁজ করা হয়। আত্মীয় কাউকে পেয়ে গেলে তাঁকে দিয়ে মৃতদেহ সরানোর কাজ সহজ হয়।

কিন্তু যাদের পরিবারের কোনো পুরুষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ উদ্ধারকারীরা ওইসব নারীর পোশাকের অংশ কোনো রকমে টেনে ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ বার করে আনেন। মৃতদেহের স্পর্শও বাঁচিয়ে চলেন সন্তর্পণে। আফগানিস্তানে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব বরাবরই প্রকট। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নারী প্রায় নেই বললে চলে। গত বছরেই তালেবান ডাক্তারিতে বা স্বাস্থ্যশিক্ষায় নারীদের নাম নথিভুক্তকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

ভূমিকম্পের সময়ে নারী চিকিৎসক এবং উদ্ধারকারীর অভাব আরও প্রকট হয়েছে। চার বছর আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল তালেবান। তার পর থেকে নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সেদেশে মেয়েরা ষষ্ঠ শ্রেণির পরে আর স্কুলে যেতে পারে না। অধিকাংশ চাকরিতেই নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাড়ির বাইরে বেশি দূর যেতে পারেন না আফগান নারীরা। যারা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করেন, বার বার আফগানিস্তানে তারা হুমকি এবং হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আফগান মেয়েদের সেই সংকট আরও প্রকট হলো বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পে। আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী ও শিশু।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারী এবং দশ বছরের অধিক বয়সি মেয়ে শিশুদের উদ্ধার করা হচ্ছে না। সরকারিভাবে আহত নারী ও মেয়ে শিশুদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও পুরুষদের তুলনায় উদ্ধার হওয়া নারী ও মেয়ে শিশুদের অনুপাত ব্যাপকভাবে কম। আফগানিস্তানের নারী অধিকারকর্মী ফাতেমেহ রেজায়ি জানিয়েছেন, তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে অপরিচিত নারী ও পুরুষদের মধ্যে শারীরিক সংস্পর্শ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি ভূমিকম্পের মতো জরুরি অবস্থাতেও এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়নি। ফলে, পুরুষ উদ্ধারকর্মীরা আহত নারীদের স্পর্শ করতে পারেন না, তাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলতেও ভয় পান। কারণ এতে ধর্মীয় বা সামাজিক শাস্তির আশঙ্কা থাকে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!