বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:০০ এএম

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমলেও বিক্রি বাড়ছে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:০০ এএম

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমলেও বিক্রি বাড়ছে

দেশের একটি বড়-সংখ্যক মানুষ জমানো টাকার লাভজনক ও নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন সঞ্চয়পত্র। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আগের দুই অর্থবছরের মতো গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। ফলে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা ঋণাত্মক (-)। এর মানে হচ্ছে, গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার; উল্টো ওই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সম্প্রতি সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৯৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মানে হচ্ছে, ওই মাসে মোট যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর ১ হাজার ২৯৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা ছিল। এই অর্থ সরকার ঋণ হিসেবে নিয়ে উন্নয়ন কর্মকা-সহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কাজে খরচ করেছে। অথচ টানা তিন অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। অর্থাৎ, ওই তিন বছরে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, তার থেকে বেশি আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক বা নেগেটিভ (-)।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ধনাত্মক (+)। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিল সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছিল সরকার। কিন্তু পরের অর্থবছর থেকে এই খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণাত্মক (-)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট বিক্রির অঙ্ক ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণাত্মক (-)। সবশেষ গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বা প্রকৃত বিক্রর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নেগেটিভ বা ঋণাত্মক (-)।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৬৮ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ এবং মেয়াদ পূর্তির আগেই ভাঙানো বাবদ ৭৪ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ হিসাবেই নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৮৪৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ এবং মেয়াদ পূর্তির আগেই ভাঙানো বাবদ পরিশোধ করা হয় ৯৯ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণাত্মক (-)।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফার হার বাড়ানো হয়। মেয়াদ পূরণ সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুসারে এই হার বেড়ে হয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয় ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ সুদহার ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

নতুন হার অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রে কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার তুলনামূলক বেশি। বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার কম। এ ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ পরিমাণ বা এর কম হলে সুদহার বেশি হবে। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার কমে আসবে। দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন যত ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রে এত দিন সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১ জুলাই থেকে তা কমিয়ে করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সেটা কমিয়ে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ করা হয়েছে। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে, অর্থাৎ মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফা ছিল ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এখন তা করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ; এখন তা ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কমানো হয়েছে। এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। এখন তা ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তা কমিয়ে করা হয়েছে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলেও মুনাফা কমবে। এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। তা হয়েছে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেটা কমিয়ে করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর বাইরে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবেও মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার। তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলে এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এখন তা ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। এখন তা ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!