গত এক মাস ধরে চড়া কাঁচাবাজার। তবে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায় পটোল, করলা, শিম, বরবটিসহ কয়েকটি সবজিতে কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এদিকে ভরা মৌসুমেও চড়া ইলিশের বাজার। ইলিশের দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। চাল-ডাল, শাক-সবজির দাম আগে থেকেই বাড়তি, তার ওপর সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। ইলিশের মৌসুমেও সরবরাহ কম থাকায় দাম আকাশচুম্বীÑ দাবি বিক্রেতাদের।
রাজধানীর শান্তিনগর, হাতিরপুল, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে সামুদ্রিক ও খাল-নদীর বেশ কয়েকটি মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চিংড়ির দাম প্রতি কেজি প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। এ ছাড়া খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট আকারের পাবদা ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০-২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০-২৮০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা এবং পাঙাশ ও সিলভারকার্প ২৫০-২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের চাষের রুই প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে ইলিশ। ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। অল্প যে পরিমাণ আসছে, দাম এত বেশি যে সাধারণ ভোক্তার পক্ষে কেনা প্রায় অসম্ভব। খুচরা বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৫০০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ মিলছে ১৫০০ টাকায়, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় এবং বড় ইলিশ (২ থেকে ২.৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩৫০০ টাকায়।
গরু-খাসির মাংস আগের দামে বিক্রি হলেও একটু বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৮০ টাকায় আর সোনালি মুরগির দাম ২৯০-৩২০ টাকা। গত এক মাসে মুরগির কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। অন্যদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম বাড়েনি।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ বলছেন, বাজারে সব পণ্যের দাম একসঙ্গে বাড়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিক্রেতারা অবশ্য বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় তাদের খুচরা দামে প্রভাব ফেলছে। শান্তিনগর কাঁচাবাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা আলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক মাস আগে যে মাছ ৩২০ টাকায় কিনেছি, এখন সেটি ৪৫০ টাকা। বাজারে এলে মনে হয় সবকিছুর দামই হঠাৎ বেড়ে গেছে। সানজিদা হক বলেন, মুরগির দাম আগে থেকেই চড়া। ভেবেছিলাম মাছের দিকে ঝুঁকব। এখন মাছের দামও নাগালের বাইরে। এতে করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ইলিশ মাছের বাজার প্রসঙ্গে বলেন, ইলিশ মাছ আমাদের জন্য নয়। এটা নিয়ে কথা বললেও মনে হয় টাকা দিতে হবে, অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, মৌসুম হলেও নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। ফলে সরবরাহ কম, দাম কমানোর সুযোগ নেই। আরেক মাছ ব্যবসায়ী মো. রফিক জানান, কয়েক দিন আগের অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন এলাকার পুকুরের মাছ মারা গেছে। এতে চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন তারা বেশি দামে মাছ ছাড়ছেন। তিনি আরও বলেন, আড়তে সংকট নেই। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। বাজারে দেখা গেছে বেগুন ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে জালি কুমড়া ৫০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি, কলার হালি ৫০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা কেজি, কচুমুখি ৪০ টাকা, শসা ৭০, টমেটো ১৬০ টাকা, শিম ১৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারে পেঁয়াজ ৮০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা, মসুর ডাল ভারতীয় ১২০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এখন এক কেজি প্যাকেটজাত আটা কোম্পানি-ভেদে ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। খোলা আটার দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আল মামুন জানান, অনেক সবজির দামই কিছুটা কমেছে। আগের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। ১০০ টাকার নিচে তরকারি ছিল না। এখন অনেক তরকারিই ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে সবজির দাম আরও কমে যাবে। কারণ সামনে শীতের মৌসুম আসছে। বাজারে নতুন সবজি আসতে শুরু করেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন