মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিচার কেবল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হতে পারবে, অন্য কোথাও নয় বলে মন্তব্য করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কোনো অভ্যন্তরীণ সামরিক আদালতে নয়, দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আদালতেও সম্ভব নয়। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বাংলাদেশ আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হোক। এই বিচার হবে একটি ইতিহাস। এটি হবে সেসব মানুষের আত্মত্যাগের সম্মাননা, যারা ন্যায়বিচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
গতকাল রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। মূলত প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল-২-এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, ‘ডিফেন্সের উচ্চ পদে যারা আছেন, তাদের বিচার এ ট্রাইব্যুনালে হবে নাকি অন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, এ রকম একটা প্রশ্ন এসেছে।’
এর জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই বিতর্ক অহেতুক। আইন সংশোধন করে তাদের (সশস্ত্র বাহিনী) যুক্ত করা হয়েছে। এ সময় আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। পরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর। তখন তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলেন। তারা নানা বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু এটা জাজমেন্টের মধ্যে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কারণ, আইন এতটা স্পষ্ট, এই আইন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) ১৯৭৩, এটা মূলত তৈরিই করা হয়েছিল আর্মড ফোর্সের (সশস্ত্র বাহিনী) লোকদের বিচার করার জন্য। পরে কিন্তু অ্যামেন্ড (সংশোধন) করে আরও কিছু উপাদান এতে যুক্ত করা হয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, সুতরাং এ প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আর্মড ফোর্সের লোকদের বিচার করতে পারবে কি না। এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং আইনের প্রত্যেকটা ধারা-উপধারা উল্লেখ করে তারা ট্রাইব্যুনালকে দেখিয়েছেন, এ আইন মূলত আর্মড ও অক্সিলিয়ারি ফোর্সের বিচারের জন্য। সে কারণে বিভিন্ন যত বাহিনী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় যত বাহিনী আছে, গোয়েন্দা সংস্থা আছে, পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন সেগমেন্টের কথা আলাদা আলাদাভাবে এ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ, যেটা ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি হবে, যেটা ওয়াইড স্প্রেড ও সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে সংঘটিত হবে, সেই অপরাধের দায়ে এ ডিসিপ্লিন ফোর্সের বা আর্মড ফোর্সের লোকদের বিচার কেবল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেই হতে পারবে, অন্য কোথাও নয়। সেটা কোনো অভ্যন্তরীণ সামরিক আদালতে নয়, বাংলাদেশে প্রচলিত যেসব ফৌজদারি আদালত আছে, সেখানেও এটা করা সম্ভব নয়। এ আইন খুবই সুস্পষ্ট।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন