*** তিন বছর আগে টার্মিনালের জমি বরাদ্দ পেলেও শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ
*** ভোগান্তির শিকার হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আশা রোগী ওপথচারীরা
টাঙ্গাইলে আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তিন বছর আগে প্রায় পাঁচ একর সরকারি জমি বরাদ্দ পেলেও এখনো শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। এক যুগ আগে পৌরসভার কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের সমিতির ভবন ও যাত্রী ছাউনি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। সেই পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে যাত্রীসেবা। বর্তমানে টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় যায়গা সংকটে যানবাহনের চাপে রাস্তা বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানযটের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বাস টার্মিনালের পাশে অবস্থিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আশা হাজারো রোগী ও চলাচলকারী পথচারীদের।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলা টাঙ্গাইল। যার আয়তনের দিক থেকে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ জেলা এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ঢাকা বিভাগের ২য় সর্ববৃহৎ। এই জেলা দিয়ে যমুনা সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। যার কারণে এটিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বারও বলা হয়। কিন্তু এই জেলায় নেই কোনো আধুনিক বাস টার্মিনাল। নতুন বাস টার্মিনাল হিসেবে পরিচিত পৌরসভার দেওলা ও কোদালিয়া এলাকায় টার্মিনালটি নির্মিত হয় ৮০ দশকে। সময়ের ব্যবধানে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রয়োজনের তুলনায় যায়গা সংকট থাকার কারণে সব সময় যানযট লেগেই থাকে। গত ২০২২ সালের জুলাইয়ে আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য টাঙ্গাইল পৌরসভা ৩০ বছর মেয়াদী ৪.৯৪ একর সরকারি জমি লিজচুক্তি বন্দোবস্ত পায় টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। নিন্তু তিন বছর পার হলেও শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ।
টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৮০০ গাড়ি। প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ গাড়ি চলে জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে, বাকি ৪০০ গাড়ি চলে বিভিন্ন উপজেলা বাস টার্মিনাল থেকে। এছাড়াও ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যটারী চালিত ইজিবাইকের আলাদা স্ট্যান্ড না থাকায় বাস টার্মিনালেই এসব যানবাহনের স্ট্যান্ড হিসেবেও রুপ নিয়েছে। ফলে যায়গা সংকটে যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম লাভলু বলেন, গত ১০ বছর আগে পৌরসভা থেকে এই বাস টার্মিনাল পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন। এরপর বাস টার্মিনালের মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন এবং যাত্রী ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত ভবনটি সংস্কার করা হয়নি। জেলার যানবাহনের সাথে সম্পৃক্ত মালিক, শ্রমিক সবারই কাম্য আধুনিক বাস টার্মিনাল।
মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ইউসুফ আলী মিয়া বলেন, আমার বাসা টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালের পাশেই, প্রতিদিন কলেজে যাওয়া আসার সময় বাস টার্মিনালের রাস্তায় যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৪০ মিনিট সময় বেশি লাগে কলেজে পৌঁছাতে। এছাড়াও বাস টার্মিনালের কাছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল এবং টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বাস টার্মিনালের এই যানজটের কারণে। তিনি আরোও বলেন, যানজটের কারণে ডেলিভারি রোগী বাস টার্মিনালেই বাচ্চা প্রসব করার ঘটনাও ঘটেছে। আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে পরিকল্পিতভাবে যানবাহন চলাচল করলে যানজটের নিরসন হবে এবং পথচারীদের ভোগান্তি লাঘব হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পথচারী জানান, বাস টার্মিনালে এমনিতেই জায়গা সংকট, এখানে বাস রাখার পাশাপাশি এখানে ট্রাক, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক এর স্ট্যান্ডও হয়েছে। এছাড়াও বাস টার্মিনালের উত্তর পাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচা বাজার। এই বাজারের দোকানগুলো প্রায় রাস্তার উপরেই বসেছে, যে কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি হতে পারে মানুষের। অতি দ্রুত অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই কাঁচা বাজার অপসারণ করা দরকার বলে দাবি করেন প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার টাঙ্গাইলের উপপরিচালক মো. শিহাব রায়হান জানান, আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য টাঙ্গাইল পৌরসভার অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া জমিতে মাটি ভরাট করার জন্য টেন্ডার হয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুতই মাটি ভরাট করে বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন