- খাতা-কলমে ৫০৭ টন ধান কেনা হলেও কৃষকরা জানেন না
- ওসি এলএসডি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কৃষক সেজে ধান দেওয়ার অভিযোগ
- একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা একাই দিয়েছেন ৩৩ টন ধান
- স্থানীয় নেতারা দিয়েছেন আরও ১১২ টন ধান
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় সরকারি ধান সংগ্রহে কৃষকদের নাম ব্যবহার করে অন্যরা ধান সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ফুড অফিসের ওসি এলএসডি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ফুড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি বিভাগের তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে ৫০৭ টন বোরো ধান সংগ্রহের কথা ছিল। খাতা-কলমে কৃষকদের নামে ধান কেনা দেখানো হলেও বাস্তবে অধিকাংশ কৃষক ধান দেননি। অভিযোগ রয়েছে, তালিকাভুক্ত কৃষকদের ৯৫ শতাংশই জানেন না তাদের নামে ধান বিক্রি হয়েছে।
সরকারি নির্ধারিত নিয়মানুযায়ী, একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১ টন এবং সর্বোচ্চ ৩ টন ধান সরবরাহ করতে পারবেন। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা একাই ৩৩ টন ধান দিয়েছেন। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে আরও ১১২ টন ধান। বাকি ৪০৭ টন ধান কৃষক সেজে ওসি এলএসডি জসিম উদ্দিন নিজেই সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কৃষি অফিসের তালিকায় থাকা বেশির ভাগ কৃষক ধান দেননি কিংবা ব্যাংক থেকে কোনো অর্থও তোলেননি। অথচ কাগজ-কলমে তাদের নামে ধান বিক্রির দেখানো হয়েছে।
ফুড অফিস সূত্র জানায়, ধান সরবরাহের টাকা কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা। জীবননগর কৃষি ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের তেমন কোনো লেনদেন চোখে পড়েনি। এদিকে ফুড অফিসের মাধ্যমে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, জীবননগর পৌর শহরের দেশ বাংলা অটো রাইস মিল ও আর কে রাইস মিলে ধান ক্রাশিং করে ফুড অফিসে দেখানো হয়েছে। দেশ বাংলা রাইস মিলের মালিক বিল্লাল মিয়া জানিয়েছেন, তাকে ১৮৫ টন ধান ক্রাশিং করতে দেওয়া হয়েছিল, যার জন্য প্রতি টনে ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ দেওয়া হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা শুধু কৃষকদের তালিকা দেই। ফুড অফিস কাদের কাছ থেকে ধান কিনছে, তা আমরা দেখি না।’
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এই দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হয়েছেন এবং তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা অন্যরা ভোগ করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন