রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১১:২২ পিএম

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি তিন শতাংশই ভুয়া

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১১:২২ পিএম

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি তিন শতাংশই ভুয়া

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্টোর কিপার পারভেজ মাহমুদ। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০১২ সালে তার চাকরি হয়। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, যে সনদের আলোকে পারভেজের চাকরি হয়েছে সেই সনদটিই সঠিক নয়। অর্থাৎ ভুয়া সনদেই তিনি চাকরি করছেন। ২০১০ সালে খাদ্য অধিদপ্তরের উপখাদ্য পরিদর্শক পদে চাকরি পান ফারজানা শাহ। চাকরির পর প্রায় পনেরো বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দেননি তিনি। পারভেজ ও ফারজানার মতো একই অবস্থা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর। 

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণলায় জানিয়েছে, কোটায় চাকরি পাওয়া ৮২ হাজার ২৮৯ জনের তথ্য যাচাই প্রথম দফায় শেষ হয়েছে। প্রথম দফার যাচাইয়ে প্রায় ৩ শতাংশ ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি করছেন বলে দেখা গেছে। আর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা কোটায় চাকরি করলেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ জমা দেননি। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রয়েছে, তাদের তথ্য সরবরাহের জন্য মন্ত্রণালয়ে ফের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ফের তথ্য যাচাইয়ে যদি ভুয়া প্রমাণিত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে জালিয়াতি করা চাকরিজীবীদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর গত বছরের ১৫ আগস্ট ১ম শ্রেণি (ক্যাডার ও ননক্যাডার), ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে কোটাপ্রাপ্তদের তথ্য পাঠাতে ৫৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও তিনটি কমিশনকে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের সংখ্যা ৯০ হাজার ৬২৮। এর মধ্যে ৮২ হাজার ২৮৯ জনের তথ্য পেয়েছে মন্ত্রণালয়। বাকিগুলোর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অধীনে কোটাপ্রাপ্তদের তালিকা জমা দেয়নি। আর বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) তাদের ৭ হাজার ৭৭৮ জন ও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ৫৬১ জনের তথ্য নির্ধারিত ছকে না পাঠানোর কারণে ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘যে ৮২ হাজার ২৮৯ জনের তথ্য আমরা পেয়েছি, সেগুলোর যাচাই কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২-৩ শতাংশ আছে যাদের তথ্য যাচাই করে মনে হয়েছে যে, সনদের আলোকে চাকরি হয়েছে সেই সনদ ভুয়া। অর্থাৎ তারা ভুয়া সনদেই চাকরি করছেন। আর ১২-১৫ শতাংশ আছে যাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য আমরা পাইনি। প্রথম দফায় তথ্যগুলো যাচাইয়ের পর আবার দ্বিতীয় যাচাই শুরু হয়েছে। যাদের ভুয়া মনে হয়েছে এবং যাদের তথ্য পাইনি সেই তথ্যগুলো দেওয়ার জন্য ফের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে’। 

তথ্য যাচাইয়ের কাজে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করেন ২০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে ১৬৮ জনের তথ্য সঠিক। বাকি ৬ জনের তথ্য ভুয়া আর ৩৩ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই’। 

তবে এই মুহূর্তে ঠিক কতজন ভুয়া সনদে চাকরি করছেন তা চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা। তারা বলছেন, প্রথম দফায় আমাদের কাছে ভুয়া মনে হলেও আমরা এখন ভুয়া বলছি না। তাদের তথ্য আবার যাচাই করব। এই দফায় যদি ভুয়া মনে হয় তাহলে তাদের তালিকা চূড়ান্ত করব। 

তারা আরও বলছেন, খুবই গুরুত্বসহকারে সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। আমরা চাই না কেউ হয়রানির শিকার হোক। তবে যে প্রক্রিয়ায় যাচাই করা করা হচ্ছে তাতে জালিয়াতি বা তথ্য গোপন করে ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

সূত্র জানায়, কোটায় সবচেয়ে বেশি চাকরি হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামালে। এই সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি হয়েছে বেশি। এই দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক ও পুলিশ কনস্টেবল পদে বেশি কোটায় চাকরি হয়। কোটায় চাকরিতে যোগদান করলেও দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার সনদ জমা দেননি। আবার অনেকে নানাভাবে সনদ জালিয়াতি করে চাকরিতে যোগদান করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ দিয়ে যোগদান করলেও পরে গেজেট জমা দেননি। 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে শুধু কোটায় চাকরির হিড়িক নয়, ওই সময় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির হিড়িক লেগেছিল। মুক্তিযুদ্ধে কোনোভাবে অংশগ্রহণ না করেও অনেকে নানা ফাঁকফোকড়, অনিয়ম, জালিয়াতি আর মোটা অংকের টাকা খরচ করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে তাদের সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনরা সরকারি চাকরি নামের ‘সোনার হরিণ’ বাগিয়ে নিয়েছেন। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বতর্মানে দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ জন। এর মধ্যে মাসিক ভাতা পান এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। বাকিদের ভাতা নানা কারণে বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শুরুতে ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। শুধু তাই নয়, ২০১২ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে সাড়ে ১২ বছরে ৩৭ হাজার ৭৩১ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন করে গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও গেজেটপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সমালোচানার পর অনেককে বাদও দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ১০ বছর থাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফারুক খানের নামে গেজেট জারির পর সমালোচনার মুখে তা আবারও যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সারা দেশে ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। তবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মতে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা লাখেরও বেশি। এসব মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে অভিযোগ এসেছে সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে সনদ বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ও জামুকার এমন কঠিন পদক্ষেপ দেখে অন্তত ২০ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যে তাদের সনদ বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন। 

সার্বিক বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, যেসব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে তা গুরুত্ব সহকারে যাচাই চলছে। যাদের তথ্য আসেনি তাদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলে কোনো অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!