দেশে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে লেনদেন। একইসঙ্গে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে লেনদেন হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক মাসে ই-ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে জুলাই মাসে আরটিজিএস লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ইএফটি লেনদেন হয়েছে ৮৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। ই-কমার্সের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ হাজার ১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি), ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও বেড়েছে লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে অর্থ লেনদেনের এই চিত্র পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারী গ্রাহক ছিলেন ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৩ জন। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৪ জনে। এক মাসে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি গ্রাহক। জুনে লেনদেনের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫ হাজার, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ ৬১ হাজারে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি ও গ্রাহকদের অভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে অনলাইন ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন গ্রাহকেরা ঘরে বসেই টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, টিকিট কেনা, কার্ডের বিল মেটানোসহ নানা সেবা নিচ্ছেন।
এতে ব্যাংকে যাওয়ার ঝামেলা কমেছে। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়। এককভাবে এই ব্যাংকের গ্রাহকেরাই দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেনের প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন করেন। এরপর রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, ইস্টার্ন ব্যাংকের স্কাই ব্যাংকিংসহ অন্যান্য ব্যাংকের অ্যাপস। করোনার পর থেকে ব্যাংকিং সেবায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে চেক জমা দিলে টাকা পেতে কয়েকদিন সময় লাগত, কুরিয়ারে টাকা পাঠানো ছিল সাধারণ বিষয়। এখন প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপসনির্ভর সেবা নিচ্ছেন। ব্যাংকারদের আশা, আগামী দিনে এই প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং নগদ টাকার ব্যবহার আরও কমবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোয় গত জুলাই মাসে চেকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। দেশে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের প্রধান মাধ্যম আরটিজিএস। গত জুনের তুলনায় জুলাই মাসে এই মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। জুলাই মাসে আরটিজিএস মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। গত জুন মাসে আরটিজিএস মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। লেনদেন ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে ইলেকটনিকস ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি)। জুন মাসে ইএফটি ব্যবহার করে লেনদেন হয়েছিল ৮৬ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। জুলাই মাসে এসে ৮৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
নগদ অর্থ উত্তোলন ও লেনদেনের জন্য জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর একটি ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ড। একক মাস গত জুলাই মাসে কার্ডে লেনদেন ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থ লেনদেন বেড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা হিসেবে পরিচিত এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) মাধ্যমেও। জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। জুলাই মাসে তা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকায় ওঠে। এ ক্ষেত্রে লেনদেন বেড়েছে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। তবে জুলাই মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেন কিছুটা কমেছে।
জুলাই মাসে এই মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৪৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। জুলাই মাসে ই-কমার্সে গ্রাহকদের ব্যয়ও বেড়েছে। জুলাই মাসে এই মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১১ কোটি টাকা। জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অর্থনৈতিক কর্মকা- ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোয় লেনদেন বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি দুই বছর আগের তুলনায় ভালো। রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি কমছে। ডলারের বিনিময় হার ও চাহিদাও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন