সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:৪০ পিএম

ইলিশ রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:৪০ পিএম

ইলিশ রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধের দিন বাদে ৭ দিনে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১০৩ টন। এবারের দুর্গাপূজায় বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারতে মোট এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে। তবে দেশে ইলিশ সংকট, বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। হাতে রয়েছে বন্ধসহ আর মাত্র ৪ দিন। এই সময়ের মধ্যে বাকি ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা যাবে কি না তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে সংশয় রয়েছে।

এরই মধ্যে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় মাছ ইলিশের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশ ধরা, পরিবহন মজুত, ক্রয় ও বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করলেও ৫ তারিখ পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি কীভাবে হবে সেটা নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা গেছে।

এদিকে লোকসানের ভয়ে ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। চাঁদপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানের ইলিশ মোকামে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি শুরুর পরদিন থেকে রপ্তানিকারকরা ইলিশ কিনছেন না। তাদের দাবি, চড়া দামে কিনে কম দামে রপ্তানি করায় লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া কলকাতার বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীদের ইলিশ কিনতে আগ্রহ নেই। আগের মতোই ইলিশের দাম দেশের বাজারে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে সাগর-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। রপ্তানিযোগ্য (৬০০ গ্রামের বেশি) ইলিশের দাম পাইকারি এক হাজার ৮০০ টাকা। এক কেজি বা এর বেশি ওজন হলে তার দাম দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। রপ্তানির জন্য মাছ প্যাকেটিং ও বেনাপোল পর্যন্ত পরিবহন খরচ যুক্ত করলে কেজিতে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত এক হাজার ৫৩৩ টাকা কেজি দরে রপ্তানি করলে বড় লোকসান হবে। এ কারণে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ইলিশ রপ্তানিতে আগ্রহী নয়।

বেনাপোলের ইলিশ রপ্তানিকারক বিশ^াস ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন বিশ^াস জানান, আমি ৩০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। এ পর্যন্ত কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি।

শার্শার বাগআঁচড়ার বড় ইলিশ রপ্তানিকারক জনতা ফিশের মালিক আব্দুল কুদ্দুস ও বেনাপোলের মাহাতাব অ্যান্ড সন্সের মালিক শাহাজালাল সোহেল বলেন, আমরা ৩০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে এ পর্যন্ত কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারিনি।

বেনাপোলের সততা ফিশের রেজাউল ইসলাম খোকন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান এবার ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। মাত্র ৩ টন ইলিশ প্রথম দিনে রপ্তানি করতে পেরেছি। মাছ না পাওয়ায় ও দাম বৃদ্ধির কারণে এরপর আর কোনো ইলিশ রপ্তানি করা যায়নি।

তারা জানান, রপ্তানি দরের চেয়ে বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে ভারতের বাজারে নিজস্ব ইলিশ থাকায় সেখানকার বাজারে দাম কম। ভারতের আমদানিকারকরাও ইলিশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যে কারণে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

বেনাপোল মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে। ওইদিন ৮টি ট্রাকে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এ ছাড়াও ১৮ সেপ্টেম্বর ২৬ হাজার ৩৫৮ কেজি, ২০ সেপ্টেম্বর ৬ হাজার কেজি, ২৩ সেপ্টেম্বর ১১ হাজার ৭৬০ কেজি, ২৪ সেপ্টেম্বর ২ হাজার কেজি, ২৫ সেপ্টেম্বর ৬ হাজার কেজি এবং গত শনিবার ১২ হাজার ৮৯৬ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। এ নিয়ে ৭ দিনে বেনাপোল দিয়ে ভারতে রপ্তানি হলো ১০২ টন ৮৩৪ কেজি (১ লাখ ২ হাজার ৮৩৪ কেজি) ইলিশ। এবার প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১২.৫ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি ১ হাজার ৫৩৩ টাকা দরে। ইলিশ মাছ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ভারতে মোট এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ টন করে ৭৫০ টন, ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ৩৬০ টন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন করে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোরসহ গোটা দেশের মানুষ। দেশের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে এক হাজার ৫৩৩ টাকায়। এটি কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অবশ্য ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ওই দরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না। ইলিশ রপ্তানির খবরে বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকার বাজারগুলোতে ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে। চড়া দামের কারণেই মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের অধিকাংশের পাতে এখনো ওঠেনি ইলিশ।

বেনাপোল বাজারের জয় মৎস্য ভান্ডারের মালিক বিকাশ দেবনাথ বলেন, স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ দু’হাজার টাকার উপরে সেখানে ভারতে এক হাজার ৫৩৩ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ দেড় হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।

বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টাইন অফিসার সজিব সাহা জানান, সরকারের বিশেষ অনুমতিতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হলেও অনেকে প্রতিষ্ঠান এখনো ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি করতে পারেনি। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত শেষ সময় থাকলেও ইলিশ প্রজননের কারণে ৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৪ অক্টোবরের পর আর কোনো ইলিশ ভারতে রপ্তানি হবে না। কম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি বিষয়ে তিনি বলেন, ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয় করা হয়ে থাকে। ৭ দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০২ টন ৮৩৪ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!