মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম ও হাসানুজ্জামান হাসান, তিস্তাপাড় থেকে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১২:০১ এএম

তিস্তাপাড়ে বোবা কান্না 

উত্তরে পানিবন্দি লাখো মানুষ

রেজাউল করিম ও হাসানুজ্জামান হাসান, তিস্তাপাড় থেকে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১২:০১ এএম

উত্তরে পানিবন্দি লাখো মানুষ

* তিস্তাপাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের

উত্তরের ৫ জেলাÑ রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি ও গাইবান্ধায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। তিস্তাপাড়ে বানভাসি মানুষের মাঝে এখন চলছে বোবা কান্না। সরকারিভাবে যে পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে বানভাসি মানুষের। তবে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, ত্রাণের কোনো অভাব নেই। প্রত্যেক বানভাসি মানুষই ত্রাণের আওতায় আসবে। 

কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গত রোববার রাতে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল সোমবার পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। রোববার মধ্যরাতে ব্যারাজ রক্ষায় ফ্লাড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা অববাহিকায় জারি করা হয় রেড এলার্ট। তবে পানি আবারও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ভারতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গজলডোবা ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণেই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে উত্তরের পাঁচ জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১২ মিটার, যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) ৩ সেন্টিমিটার নিচে। আগের রাতে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন দিনের ভারি বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। রোববার সকাল থেকে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ৮০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা ক্রমেই বেড়ে গিয়ে রাতে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তাপাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

অতিরিক্ত পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লাড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের। ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কিছু অংশ বন্যার কবলে পড়ে।

বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন তিস্তা অববাহিকার ৮টি উপজেলার তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ। পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলার সোলেডি স্পার বাঁধ-২ এর ব্রিজ অংশের নিচে সুড়ঙ্গ হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাঁধটি ধসে যাওয়ারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেশকিছু রাস্তাঘাট, সড়ক ডুবে গেছে।

রংপুরের গংগাচড়া তিস্তা দ্বিতীয় সেতুর সেতু রক্ষা বাঁধের আরও ২০ মিটার ধসে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে সেতুটি। 

হাতীবান্ধার দোয়ানী-গড্ডিমারী সড়ক উপচে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে পানিবন্দি এলাকার সংখ্যা। নিদারুণ কষ্টে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। গবাদি পশুপাখি নিয়ে বেশ বিপদে পড়েছেন খামারিরা। কেউ কেউ এসব পশুকে পাশের সড়কে বা উঁচু এলাকায় তাঁবুর নিচে রেখেছেন। উঁচু স্থানে মাচা বানিয়ে চলছে রান্না। 

টিউবওয়েল-টয়লেট ডুবে যাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন এসব এলাকার নারীরা। ডুবে গেছে মৎস্য খামার, আমন ধানসহ নানা জাতের সবজির খেত। 

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। সিন্দুর্না এলাকার রইচ উদ্দিন বলেন, বাড়ির উঠানে কোমর পানি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। শিশুদের কোলে নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। কখন কোন সন্তান বিছানা থেকে পড়ে পানিতে ডুবে যায়, সে আতঙ্কে রাত কেটেছে।

গোবর্দ্ধন গ্রামের ছকমল মিয়া বলেন, হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। সবখানে পানি আর পানি। মধ্যবয়সি আমন ধানের খেতসহ ফসল ডুবে নষ্ট হচ্ছে। পুকুর ডুবে ভেসে যাচ্ছে মাছ।

গংগাচড়ার বাগেরহাটের পানিবন্দি আছিয়া বেগম জানান, ঘরে-বাইরে পানি, চুলায় পানি। রান্না করা হয়নি, ছেলেমেয়ে নিয়ে উপোস রয়েছি। চর ইচলির বৃদ্ধ জয়নাল জানান, আমরা ত্রাণ চাই না, ঘরে পানি উঠলেও নদী খনন চাই। 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ও লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে রাতে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সকাল থেকে পানি কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। বৃষ্টির পানি থাকায় বন্যার পানি নেমে যেতে একটু সময় লাগছে। তবে উজানের চাপ কমে যাওয়ায় রাতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!