সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নামে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ১২টি আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা দেবে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। সভায় ৩২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওমর ফারুক খান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজ ও পুনরুদ্ধারে।’
তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কিছু ব্যাংক অন্যদের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি সম্পন্ন হলে পুনরুদ্ধারকৃত অর্থ কীভাবে জমা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হবে।’ তিনি আরও জানান, বিশেষ সিআইডি প্রাথমিকভাবে পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১১টি দেশীয় শিল্পগোষ্ঠীকে শনাক্ত করেছে। যার মধ্যে বসুন্ধরা, নাসা এবং এস আলম গ্রুপের নাম রয়েছে।
ওমর ফারুক খান বলেন, ‘আমরা নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (এনডিএ) আওতায় এসব সম্পদ পুনরুদ্ধার সংস্থার সঙ্গে কাজ করব। কিছু প্রাথমিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, উদ্যোগটি কোনো একটি ব্যাংকের নয়, বরং একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহত্তর ব্যাংকিং উদ্যোগ। পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছে এবং ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনডিএ সই করে কাজ করতে। সভায় প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আরও জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পাচারে জড়িত অভিযোগ রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল ও সামিটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের উপকারে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (স্টার) ইনিশিয়েটিভ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসি সিসি), যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে) এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (আইসিএআর) পাচার হওয়া অর্থের খোঁজে কাজ করেছে। এ সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, দেশ থেকে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে, তা উদ্ধারে ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো নিজস্ব চিন্তায় যদি কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে, যারা পাচার করা অর্থ উদ্ধারে কাজ করে, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে বলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে প্রাথমিকভাবে চুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হলে তারা ডকুমেন্ট নিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারবে কোন সম্পদ উদ্ধার করা যাবে, কোনটি যাবে না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন