বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০৪:০৩ এএম

প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০৪:০৩ এএম

প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে যে চিত্র সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে, তা শুধু একক কোনো প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং আমাদের রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতা কাঠামোর ভয়াবহ দুর্বলতার প্রতিফলন। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা, সেটি উদ্বোধনের পর থেকেই বারবার বন্ধ হয়ে পড়ছে, যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লা সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অথচ প্রতিদিন সরকারের গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরোনো লোহা বিক্রির নামে কোটি টাকার প্রতারণা, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চুরি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

প্রশ্ন জাগে যে প্রকল্প দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়ক হওয়ার কথা ছিল, সেটি আজ কেন রাষ্ট্রের ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে? কেন এমন একটি কেন্দ্র, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশেও কঠোর বিধিনিষেধ, সেখানে নিয়মিত চুরি, প্রতারণা ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে? এসব ঘটনার পেছনে নিশ্চয়ই উচ্চপর্যায়ের যোগসাজশ রয়েছে। কেবল কয়েকজন নি¤œপদস্থ কর্মচারীকে দায়ী করে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না।

বিদ্যুৎ খাত দীর্ঘদিন ধরেই ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’-এর নামে অদক্ষতা ও দুর্নীতির এক কুখ্যাত মডেলে পরিণত হয়েছে। যেসব কেন্দ্র উৎপাদনে অক্ষম, সেগুলোর জন্যও জনগণের টাকায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। এটি শুধু আর্থিক অপচয় নয়, রাষ্ট্রের নৈতিক ব্যর্থতারও প্রতীক।

রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত। কিন্তু প্রকল্পটির শুরু থেকেই পরিবেশগত উদ্বেগ, চুক্তিগত অস্বচ্ছতা এবং যন্ত্রপাতির মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রটির কারিগরি ত্রুটি ও অপারেশনাল দুর্বলতা ছাড়াও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চুরি-দুর্নীতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে বেতন বৈষম্য ও কর মওকুফে অনিয়মের প্রমাণ মেলাও পরিস্থিতির গভীরতা প্রকাশ করে।

সরকারের উচিত এসব অনিয়মের দায় কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিষ্ঠানগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। যে কর্মকর্তারা বা নীতিনির্ধারকেরা এমন প্রকল্প অনুমোদন ও পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন, তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে সব ধরনের যৌথ প্রকল্পের চুক্তি, ব্যয়, উৎপাদন সক্ষমতা ও ক্যাপাসিটি পেমেন্টের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে জনগণের সামনে।

জনগণের করের টাকায় পরিচালিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এই মৌলিক সত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে রামপালের মতো প্রকল্পগুলো একের পর এক ব্যর্থ হবে, আর দুর্নীতির দায় বইতে হবে সাধারণ মানুষকেই। সময় এসেছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার। নইলে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপচয়, প্রতারণা ও দুর্নীতির এই চক্র কখনোই ভাঙা যাবে না।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি, উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। যখন কোনো প্রতিষ্ঠান মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য গঠিত হয়, তখন তার প্রতি জনগণের প্রত্যাশা থাকে যে, প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানেই এই জবাবদিহিতার অভাব প্রকট। 

আমরা মনে করি, জবাবদিহিতা না থাকলে একটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, সেবার মান নেমে যায় এবং জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয়। এমনকি অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি অর্থের অপচয়, নীতি লঙ্ঘন কিংবা অব্যবস্থাপনার জন্য কেউ কোনো দায় নিচ্ছে না। এই অবস্থায় ন্যায়বিচার, উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এটি কেবল প্রশাসনিক শুদ্ধতা নয় সেই সঙ্গে জনগণের আস্থা ও গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করার পূর্বশর্ত।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!