সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মীপূজাকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। যেখানে ক্রেতা শুধুই নারী, সেখানে যেতে পারেন না পুরুষরা।
জানা যায়, ৬৬ বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিবছর লক্ষ্মীপূজার পরদিন বসে এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। এরই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপূজার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির চত্বরে বসেছিল এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। মেলায় বিক্রেতা দু-একজন পুরুষ হলেও ক্রেতা শুধুই নারী। মেলায় কোনো পুরুষকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমন কি এলাকার জামাইদেরও মেলায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। এজন্য মেলা চত্বরের আশপাশে বিপুলসংখ্যক উৎসুক দর্শনার্থী পুরুষদের ভিড় জমে। শিশু ও নারী ক্রেতাদের নিয়ে জমে ওঠে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই বউমেলা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। নারীদের প্রসাধন সামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও ছোটদের খেলনা, গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ রকমারি মুখরোচক খাবারও ছিল। সকাল থেকেই মেলায় ভিড় জমতে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি নারী ও শিশুদের।
বউমেলায় কেনাকাটা করতে আসা ফাতেমা সানু, মল্লিকা গুপ্তা, মাধবী রানীসহ মেলায় আগত একাধিক নারী বলেন, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা হয়ে থাকে। মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা হওয়ায় নির্বঘেœ মেলায় অবস্থান করাসহ কেনাকাটা করা যায়। তবে মেলায় আসলে খুব আনন্দ লাগে। অনেক পরিচিত নারী ও আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা স্বাক্ষাত হয়। জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যায়। বউমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বহু আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসেন। সবাই মিলে মেলায় ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দেওয়া যায়, মেলার আনন্দ উপভোগ করা যায়। তাদের ঘোরাফেরাসহ কেনাকাটা শেষ হলে তাদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। এ জন্য মেলার বাইরে অপেক্ষা করছি। মেলাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই একই নিয়মে পরিচালিত হয়ে আসছে।
মেলার আয়োজক সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস ও সাধারণ সম্পাদক গৌচন্দ্র সরকার বলেন, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর পূজার পরদিন বউমেলার আয়োজন করা হয়। সুজাপুরের জমিদার বিমল বাবু এই মেলাটি শুরু করেন। জমিদার সপরিবারে ভারতে চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া দীর্ঘ ৬৬ বছরের বেশি সময়ের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলাটি সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর হয়ে আসছে। তবে মেলাটি জমিদারের আমল থেকেই শুধুমাত্র নারীদের জন্যই। এ কারণে মেলায় কোনো পুরুষকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। মেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি এ কে এম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, ঐতিহ্যবাহী বউমেলাটির সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, বউমেলায় সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর রাখা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন