বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতিবিজড়িত সমাধিমন্দির ‘তাজমহল’ এখন ধ্বংসের পথে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা তাজমহলখ্যাত এ স্থাপত্যের নানা অলংকরণ ভেঙে ফেলে। এ ছাড়া নির্মাণের পর থেকে অদ্যাবধি সংস্কারের অভাবে বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাজমহলটি। তবে বরিশালবাসীর স্মৃতিতে এখনো অম্লান এই স্থাপনাটি।
সূত্র মতে, জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামে পারিবারিকভাবে নির্মিত তাজমহল স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা পরিদর্শন করে সংস্কারের আশ্বাস দিলেও দীর্ঘদিনে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি আগৈলঝাড়া-গোপালগঞ্জ মহাসড়ক থেকে তাজমহল পর্যন্ত ইট-সলিংয়ের রাস্তাটি ভেঙে একাকার হয়ে গেলেও তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অতীতে প্রতিবছর তাজমহলের পাশে মেলার আয়োজন করা হলেও পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
আগৈলঝাড়ার তাজমহল সম্পর্কে ইতিহাসবিদ শিকদার রেজাউল করিম বলেন, ৮২ বছর আগে বাংলা ১৩৪৭ সালে জমিদার কামিনী গুপ্তের মেজো ছেলে ডা. শরৎ চন্দ্র গুপ্ত তার পূর্বপুরুষদের পারিবারিক ঐতিহ্যের স্মৃতি ধরে রাখতে নিজ বাড়ির পুকুরপাড়ে আগ্রার তাজমহলের অনুকরণে একটি তাজমহল নির্মাণ করেন। সাতটি মূল স্তম্ভের ওপর বর্গাকার সমাধিমন্দিরের নামকরণ করা হয় কালীতারা নিত্যানন্দ স্মৃতি মন্দির। নিপুণ নির্মাণশৈলীর নৈপুণ্যের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ ওই স্মৃতি মন্দিরটিকে ‘তাজমহল’ নামেই আখ্যায়িত করেছে। সমাধিটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেদিক থেকেই দেখা হোক না কেন, দেখতে ঠিক তাজমহলের মতো।
সরেজমিন দেখা গেছে, তাজমহলের গায়ে খোদাই করে লেখা রয়েছে-‘আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার কামিনী গুপ্তের ছেলে ডা. শরৎ চন্দ্র গুপ্ত কর্তৃক তার মাতা কালীতারাসহ বংশের যশোঃ প্রসাদাৎ ভুবি প্রত্য ভূতভুবি, দিষ্টা দাশগুপ্ত, পভুব সুন্দানী’। তাজমহলের পশ্চিম পাশে জ্যোতি কালী মোহন দাশগুপ্ত, উত্তরে পিতৃসম সত্যভামা গুপ্তাসহ তিনটি সমাধি রয়েছে। চারপাশে রয়েছে চারটি মিনার, যা তাজমহলকে আরও মনোরম করেছে।
স্থানীয় সবুজ হালদার বলেন, ওই জমিদারের বংশধররা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন। তিনি আরও জানান, এ স্থাপত্যকীর্তিটি যেমন রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার, তেমনি জমিদারের সমস্ত সম্পত্তি উদ্ধার করা হলে এখানে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখন বণিক বলেন, এই তাজমহলখ্যাত স্থাপনাটি একজন ব্যক্তিমালিকানার। তাই ভবিষ্যতে ওপরস্থ মহল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন