বাংলাদেশ সরকার দেশের বিমা খাতে পেশাগত ঝুঁঁকি বিশ্লেষক অর্থাৎ, অ্যাকচুয়ারি তৈরির লক্ষ্যে একটি বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ অ্যাকচুয়ারি অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করা হয়েছে এবং তা গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশ করে মতামত আহ্বান করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
জানা গেছে, দেশের ৮২টি বিমা কোম্পানির জন্য অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন অ্যাকচুয়ারির প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে দেশে মাত্র তিন-চারজন পেশাদার অ্যাকচুয়ারি রয়েছেন, যাদের কেউ কেউ আবার বিদেশে অবস্থান করছেন। মোটাদাগে একচুয়ারি হলেন একজন পেশাদার ব্যক্তি, যিনি গণিত, পরিসংখ্যান এবং আর্থিক তত্ত্ব ব্যবহার করে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোর ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা মূল্যায়ন করেন। তারা এই ঝুঁকিগুলোর আর্থিক প্রভাব বিশ্লেষণ করে বিমা এবং অন্যান্য সংস্থার জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করতে এবং সঠিক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করতে সহায়তা করেন।
খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকার একটি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন ইনস্টিটিউট গঠন করবে, যেখানে অ্যাকচুয়ারি তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা ও পেশাগত মান নির্ধারণের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বর্তমানে একমাত্র পেশাগত সংগঠন ‘অ্যাকচুয়ারিয়াল সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ বিলুপ্ত করে এই নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হবে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য একটি কাউন্সিল গঠিত হবে, যার প্রথম তিন মেয়াদে আইডিআরএর চেয়ারম্যান স্বয়ং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কাউন্সিল সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচন করবেন।
অধ্যাদেশে অ্যাকচুয়ারিদের জন্য পেশাগত আচরণের নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমনÑ কেউ যদি পেশাগত ফি বা কমিশন এমন কাউকে দেন, যিনি সদস্য নন, তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া অন্য পেশায় যুক্ত হওয়া, অযোগ্য কাউকে স্বাক্ষর করতে দেওয়াÑ এগুলোও অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। অন্যদিকে, নিবন্ধিত সদস্য ছাড়া কোনো কোম্পানি অ্যাকচুয়ারিয়াল কাজ করতে পারবে না এবং শুধু বৈধ প্র্যাকটিস সার্টিফিকেটধারী সদস্যই ‘অ্যাকচুয়ারি’ উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং অভিজ্ঞ অ্যাকচুয়ারি মো. সোহারাব উদ্দিন উদ্যোগটিকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই নিজস্ব অ্যাকচুয়ারিয়াল ইনস্টিটিউট আছে, অথচ বাংলাদেশে এতদিনেও একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে একটি শীর্ষস্থানীয় বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, নতুন কাউন্সিলে সরকারি কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিদের সরাসরি অন্তর্ভুক্তি একটি পেশাদার সংগঠনের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে। এতে এটি একপর্যায়ে আইডিআরএর একটি বিভাগে রূপ নিতে পারে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি (৩৬টি জীবন বিমা ও ৪৬টি সাধারণ বিমা) থাকলেও দক্ষ অ্যাকচুয়ারির সংকটে খাতটি নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। সরকার যদি প্রস্তাবিত ইনস্টিটিউট সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে বিমা ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মান বহুলাংশে উন্নত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন