শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরজাত হোসেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

ভিন্ন চোখে কক্সবাজার

আরজাত হোসেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

ভিন্ন চোখে কক্সবাজার

কক্সবাজার মানে শুধুই কি সাগর, মেরিন ড্রাইভ ও সেন্টমার্টিন? চলুন আজ জেনে আসি কক্সবাজারের এমন কিছু স্থান যেখানে যেতে পারলে ভ্রমণের স্বাদ বাড়বে শতগুণ। কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলা যথাক্রমে টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার, চকরিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া। প্রায় সব উপজেলাতেই রয়েছে ভ্রমণের জন্য অপূর্ব জায়গা। এর বাইরে কক্সবাজার জেলা সংলগ্ন বান্দরবান জেলার কিছু অংশ যা ‘মিনি বান্দরবান’ নামেও পরিচিত, এই স্থানের বেশকিছু স্থান যা খুবই হৃদয়গ্রাহী। ভ্রমণপিপাসুদের জন্যই কক্সবাজার পর্যটন নগরী। আজকে জানাব কক্সবাজারের বেশকিছু ভ্রমণ গন্তব্যের কথা-

রামু ক্যান্টনমেন্ট

এটি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় অবস্থিত। গহীন অরণ্যে ১ মার্চ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সেনানিবাসের এরিয়া জোন সবুজের সমারোহে ভরা এতটাই অপূর্ব যে, যে কেউ এই স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবে। সেনানিবাসে যাওয়ার সড়কের পাশে মিলবে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ‘আইসোলেটেড নারিকেল বাগান’ রামু চৌমুহনী স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এই বাগানের অবস্থান। বাগানের পূর্বপাশে রয়েছে ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’। এখানে একই সঙ্গে সেনানিবাস, নারিকেল বাগান ও গার্ডেন যা অপূর্ব দৃশ্যে রূপ নিয়েছে। কক্সবাজার জেলার মানুষদের জন্য এটি খুব পরিচিত হলেও দূরের পর্যটকদের কাছে অচেনা।

রামু রাবার বাগান

রামুর ঐতিহ্যবাহী রাবার বাগান এখন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এখানে সমতল এবং পাহাড়ের দারুণ মেলবন্ধন। বড় বড় পাহাড় আর টিলার ওপর রাবার গাছের সারি। ভোর বেলা এই বাগানের মেঠোপথ বেয়ে হাঁটলে দেখা যায় রাবার সংগ্রহের দৃশ্য। এই এক খ- অরণ্য যেন সবুজে ঘেরা। এ ছাড়া এই রাবার বাগান ঘিরে তৈরি হয়েছে ‘বনবিভাগ উত্তর রেস্ট হাউস’ ( বিশ্রামাগার) যেখানে প্রতিদিন বিকেলে অনেক পর্যটকদের আসতে দেখা যায়। এই অপূর্ব স্থান কক্সবাজার ভ্রমণকে তৃপ্তিদায়ক করে তুলবে।

সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক

মহেশখালী উপজেলায় অবস্থিত এই বালুকাময় সমুদ্র তীরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখান থেকে দেখা যায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত। এ ছাড়া মনমাতানো ঝিরিঝিরি শব্দ, দৃষ্টিনন্দন লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির ঝাঁক বাঁধা পাখি ও শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ। এই অনন্য রূপের স্থান পর্যটকদের কাছে তেমন পরিচিত না হলেও এখান থেকে উপভোগ করা যায় পরিপূর্ণ তৃপ্তি এবং এটি কক্সবাজার জেলার লোকের কাছে খুবই পরিচিত স্থান।

আঁধার মানিক/কানা রাজার গুহা

কক্সবাজারে একই সঙ্গে, পাহাড়, সমুদ্র, বন, সব থাকাই এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়ে যায় যা পর্যটকদের চোখে পড়ে না। অরণ্যের গহিনে পাহাড়ে দেখা যায় দুটি গুহা, যা আঁধার মানিক নামে পরিচিত। এই স্থানে যাওয়ার পথেই একটি তৃপ্তি পাওয়া যায়। যেন চলে যাচ্ছি পাহাড়ের গা বেয়ে কোনো এক রহস্যের সন্ধানে, গা ছমছম শিউরে ওঠার মতো অনুভব। দুটি গুহার মধ্যে একটি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাটুয়ারটেক সৈকতে নিকটে অবস্থিত।

আরেকটি রামু উপজেলায় লর্টউখিয়ার ঘুনায় অবস্থিত। এই গুহার শুরুতে একটি প্রবেশপথ আছে, হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে গিয়ে একটি বসার মতো জায়গা আছে, ওখান থেকে পুনরায় কয়েকটি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ আছে। ভেতরে অনেক অন্ধকার যেখানে আলো পৌঁছাতে পারে না, আর সুড়ঙ্গের বেশি ভেতরে অক্সিজেন থাকে না। এই স্থানে অনেক দূর থেকে লোক আসে, কিন্তু ভয়ে অনেকেই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করে না। কক্সবাজারের এরকম বৈচিত্র্যময় স্থানগুলো অন্যকোথাও পাওয়া যায় না।

গোলাপ বাগান ও নিভৃতে নিসর্গ

চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি নদীর তীর ঘেঁষে এই স্থান দুটি পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠেছে নতুন গন্তব্য। নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাজুড়ে গোলাপের চাষ হয়। এই দৃশ্য পার্শ্বরাস্তার যাত্রীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়, এই সুন্দর বাগান দেখতে অনেকেই ঘুরতে যায়। মাতামুহুরি ব্রিজ হতে ৮ কিলোমিটার পূর্বে নদী, পাহাড় মিলে তৈরি হয়েছে নিভৃতে নিসর্গ। যেখানে রাখাইন গ্রামের পাশে হৃদয় জুড়ানো সবুজ পাহাড়ের সারি, নদী বেয়ে একটু এগোলেই মিলবে বিশাল শ্বেত পাহাড়। নদীর জলে নৌকা নিয়ে এই দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা যাওয়া শুরু করেছে।

পরিচিত কিছু দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার জেলায় বেশ কিছু পরিচিত স্থান আছে যেগুলোতে প্রতিদিনই পর্যটকরা ঘুরতে আসেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান হচ্ছে - ১০০ ফুট ভুবন শান্তি বৌদ্ধ বিহার, রামকোট বৌদ্ধবিহার, এখানে রয়েছে অনেক ধরনের মূর্তি ও প্রাচীন ভবন, রামকোট বৌদ্ধবিহারে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ ও দেখা যায়। মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, যেখানে ম্যানগ্রোভ বনের ওপর দিয়ে লম্বা জেটি, এবং মন্দির থেকে নদীর দৃশ্য খুবই আকর্ষণীয়। টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর কূল ঘেঁষে টেকনাফ থানা চত্বরে মাথিনের কূপ অবস্থিত। রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন এবং এক পুলিশের বেদনাবিধুর প্রেম কাহিনির সাক্ষী এই মাথিনের কূপ। এটি দেখতে অনেক পর্যটকরা আসেন। নাফ নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে ট্রানজিট ঘাট, ( জেটি ) যেখানে দাঁড়ালে নদীর ওপারে দেখা যায় মায়ানমারের সীমানা এবং বড় বড় পাহাড়। এখান থেকে সেন্টমার্টিনের লন্স পাওয়া যায়। এই জায়গাটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্পট। এ ছাড়া রয়েছে খান বিচ, যেখানে বর্ষাকালে পাওয়া যায় টাঙ্গুয়ার হাওরের রূপ ও অনুভব। অপূর্ব এই দৃশ্য দেখতে কক্সবাজারের স্থানীয়রা ঘুরতে যায়।

চকরিয়া উপজেলায় একটি চিড়িয়াখানা ও রয়েছে, প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসে অসংখ্য দর্শনার্থী। ডুলহাজারা চিড়িয়াখানায় গেলে দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাণী যেমন- বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, কুমির, জলহস্তি, মায়া হরিণ, সম্বর হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ, কুমির, বানর, সাপ ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে দেখা যায় মিঠা ও লোনা পানির নানান প্রজাতির জলজ প্রাণীর সংগ্রহশালা। আর শীতকালে কক্সবাজার শহরের পাশেই খেজুর রসের বাজার বসে। খেজুর বাগানের এই দৃশ্য অপূর্ব নিদর্শন। পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।

এবার আসি ‘মিনি বান্দরবান’

রামু উপজেলা সংলগ্ন নাইক্ষংছড়ি উপজেলা, যা বান্দরবান জেলার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটি কক্সবাজার মহাসড়কের খুব কাছাকাছি হওয়ায় অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে। রামু স্টেশন থেকে ১২ কিলোমিটার পর এই নাইক্ষংছড়ি উপজেলায় গেলে পাওয়া যায় বান্দরবানের স্বাদ। অনেক বড় পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটি লেক (হৃদ)। যেখানে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করা যায়। ঝুলন্ত ব্রিজে হাঁটা, পাহাড় এবং নৌকা ভ্রমণের দারুণ তৃপ্তি একইসঙ্গে পাওয়া যায়। পাহাড় ঘেঁষে বাস করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী।

নাইক্ষংছড়ি স্টেশন থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে সোনাইছড়ি এলাকায় পাহাড়ের গায়ে রাস্তায় উঠলে মনে হয় মেঘের সঙ্গে আকাশভ্রমণ করছি। ৯ কিলোমিটার এই রাস্তায় যাত্রা করলে হৃদয় শান্ত হয়ে যায়। এই রাস্তায় সর্বোচ্চ পাহাড়ে তৈরি করেছে ‘শৈলচূড়া ক্যাফে’ এবং বাঁশের তৈরি ‘মেঘকুঞ্জ’ নামের টংঘর। এই ঘরে দাঁড়ালে পাহাড়, মেঘ, অপূর্ব রাস্তা, পাহাড়ের গায়ে কলাবাগান খুব সুন্দরভাবে উপলব্ধি করা যায়। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখার জন্য সাহসী পর্যটকেরা ছুটে আসে বাইক, ঈঘএ ও বাস নিয়ে। এই এলকায় দেখা যায় রাখাইনদের গাছের তৈরি দুতলা বাড়ি ও টংঘর। এই দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে হলে প্রথমে আসতে হবে কক্সবাজার।

ঝর্ণা ও চা-বাগান

কক্সবাজার এবং মিনি বান্দরবান এই দুই এলাকাজুড়ে খুব কাছাকাছি অনেকগুলো ঝর্ণা রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ঝর্ণাগুলো হলো সবার পরিচিত হিমছড়ি ঝর্ণা, বাকিগুলো যথাক্রমে কামংজয় (বরইতলি ঝর্ণা ), মংজয় মাসা ঝর্ণা, চাকঢালা সীমান্ত ঝর্ণা, ফাত্রাঝিরি ঝর্ণা ও সোনালি ঝর্ণা। এখানে পর্যটকদের পৌঁছানো খুবই কষ্টসাধ্য হলেও স্থানীয় এবং কক্সবাজার জেলার লোকেরা খুব সহজেই চলে যায়। পর্যটকরা যদি স্থানীয় কোনো পরিচিত সঙ্গীকে সঙ্গে নিতে পারে তাহলে এই ঝর্ণাগুলো উপভোগ করা তাদের পক্ষেও সম্ভব। ঝর্ণায় যাওয়ার যে পথ এটাই শতভাগ তৃপ্তি দিয়ে দেয়, পাহাড়, জঙ্গল, নদী, খাল বেয়ে ঝর্ণার সন্ধান পাওয়াটা ভীষণ তৃপ্তিদায়ক।

চাকঢালার আশারতলী নামক স্থানে বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ হয় চা-পাতার। এটি আশারতলী চা-বাগান নামে পরিচিত। কিন্তু পথ দুর্গম হাওয়ায় এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে তেমন পরিচিত নয়। তবে কক্সবাজারের স্থানীয় লোকেরা প্রায়ই দেখতে যায়।

একনজরে কক্সবাজার

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মেরিনড্রাইভ ছাড়া উপরোক্ত যে দর্শনীয় স্থানগুলো বর্ণনা আছে এগুলো অনেকের কাছে অপরিচিত। একই সঙ্গে সমুদ্র, পাহাড়, বন, ঝর্ণা ও লেক দেখার মতো উপযুক্ত জায়গায় হচ্ছে এই বৈচিত্র্যময় কক্সবাজার। যদিও এই আলোচনায় কুতুবদিয়া, মাতার বাড়ির মতো অনেক দর্শনীয় স্থানের কথা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। যারা ভ্রমণপিপাসু তাদের আমাদের এই বৈচিত্র্যময় কক্সবাজারে স্বাগতম।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!