- প্রথম ধাপে গাজার জরুরি মানবিক ও অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। মেয়াদ ছয় মাস, ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় ধাপ তিন বছরব্যাপী, এতে প্রয়োজন ৩০ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় ও শেষ ধাপে পূর্ণ পুনর্গঠন ও দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারের কাজ
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আরব দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় তার সরকার গাজার পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য তিন ধাপের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রামাল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লাখো মানুষ গৃহহীন এবং কয়েক দশক পেছনে চলে গেছে গোটা অঞ্চলটি। এই অবস্থায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মুস্তাফা জানান, প্রথম ধাপে গাজার জরুরি মানবিক ও অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই ধাপের মেয়াদ ছয় মাস, ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয় ধাপ তিন বছরব্যাপী চলবে, এতে প্রয়োজন হবে ৩০ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় ও শেষ ধাপে থাকবে পূর্ণ পুনর্গঠন ও দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারের কাজ। তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাস পর মিসরে গাজার পুনর্গঠন নিয়ে একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দিতে হবে এবং মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনের উপকরণ প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।
গাজার প্রশাসন নিয়ে বাইরের কোনো শর্ত মেনে না নেওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়ে মুস্তাফা বলেন, ‘আমরা কারো কাছ থেকে কোনো নিশ্চয়তা চাইনি।’ তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) বর্তমানে ইসরায়েলি দখলাধীন পশ্চিম তীর পরিচালনা করছে এবং পরিস্থিতি অনুকূলে এলে গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও পুনরায় গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কোনো অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকবে না।’
তবে ইসরায়েল যুদ্ধশেষে গাজার শাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা হামাসÑদুই পক্ষকেই কোনো ভূমিকা দিতে চায় না। এই বিষয়ে ইঙ্গিত করে মুস্তাফা পুনরায় বলেন, গাজা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সেখানে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পিএ ‘দিনরাত কাজ করছে।’
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শিগগিরই শুরু হবে বলে জানা গেছে। হামাস এ পর্যায়ে যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান, ইসরায়েলের পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও নিজেদের অস্ত্র রাখার অধিকার বজায় রাখার দাবি জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়। এর প্রথম ধাপে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় গাজার পুনর্গঠন এবং হামাসবিহীন নতুন শাসন কাঠামো গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হামলার ফলে অঞ্চলটি প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন